বৃহঃস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) হজরত বিবি খাদিজা ছাত্রী হলে পুরুষ কর্মচারীদের দিয়ে কক্ষ তল্লাশির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন হলের শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে হলের বিভিন্ন কক্ষে বৈদ্যুতিক চুলাসহ অবৈধ সামগ্রী উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। এ সময় একাধিক পুরুষ কর্মচারী অতর্কিতভাবে কক্ষে ঢুকে তল্লাশি চালান, যা তাদের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর ছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলের নিচতলায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। রাত সোয়া ১টার দিকে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম মাসুদ, অধ্যাপক শফিকুর রহমানসহ কয়েকজন সহকারী হল প্রভোস্ট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শোনেন এবং তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে রাত আনুমানিক ২টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কক্ষে ফিরে যান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে হলে থাকা একাধিক ছাত্রী বলেন, আমরা বুঝতেই পারিনি কী হচ্ছে। হঠাৎ কিছু পুরুষ স্টাফ আমাদের ফ্লোরে চলে আসে। আমরা ওড়না পড়ারও সুযোগ পাইনি। এটা খুবই লজ্জাজনক এবং ভীতিকর ছিল।
একই বিষয়ে আরেক শিক্ষার্থী জানান, আমি অসুস্থ থাকায় গ্রাম থেকে এসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। হঠাৎ দরজায় ধাক্কাধাক্কি ও চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলতেই এক পুরুষ কর্মচারী কক্ষে ঢুকে পড়ে তল্লাশি শুরু করেন, যা আমাকে আতঙ্কিত করে তোলে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ বলেন, আজ বিবি খাদিজা হলে যা হয়েছে, তা কোনো সচেতন ও দায়িত্বশীল প্রশাসনের কাজ হতে পারে না। ছাত্রীদের হলে পুরুষ স্টাফ দিয়ে তল্লাশি—এটা কোন আইনে বৈধ? হল প্রশাসনের এমন এখতিয়ার আছে? ইলেকট্রিক জিনিসপত্র তল্লাশি মেনে নিলেও, সেটা নারী স্টাফ দিয়ে হওয়া উচিত ছিল। ছাত্রীদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পুরুষ স্টাফ দিয়ে উল্টেপাল্টে দেখার অধিকার কারো নেই। প্রশ্ন হলো, নারীদের হলে প্রভোস্টও কেন পুরুষ? নোবিপ্রবিতে কি নারী শিক্ষিকার অভাব? মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত না করে এমন তল্লাশি কার্যক্রম চালানো শুধু হাস্যকরই নয়, চরম দায়িত্বহীনতাও।
হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আবদুল কাইয়ুম মাসুদ বলেন, শূন্য আসনের তালিকা তৈরি ও অবৈধ বৈদ্যুতিক সামগ্রী উদ্ধারে আমরা অভিযান চালিয়েছি। তবে ছাত্রী হলে কোনো পুরুষ কর্মচারীর কক্ষে ঢোকার সুযোগ নেই। কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে থাকে, তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, অভিযানের সময় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত হল প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা হলে অবস্থান করেছিলেন, তবে তখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ আসেনি। বুধবার সকালে হল প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আরেক দফা বৈঠক হয়। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)