বুধবার, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
বিশ্বে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বর্তমানে চাল তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে। এছাড়াও মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, ছাগল উৎপাদনে পঞ্চম, আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং রসুন উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। সম্প্রতি চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক কৃষি প্রধান দেশকে পিছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট চাষযোগ্য জমির প্রায় ৭৭-৮০ শতাংশের মধ্যেই ধানের আবাদ হয়।
তথ্য বলছে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছিল ৫০১.১৭ লক্ষ মেট্রিক টন যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৭.৩ শতাংশ বেশি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশে মোট কৃষিজ উৎপাদন প্রায় ৩.৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক দশকেই খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ১২৯.৫১ শতাংশ। মৎস্য খাতে মোট উৎপাদন ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে থাকা ৪১.৩৪ লক্ষ মেট্রিক টন থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৫০.৮০ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে।
এছাড়া দুধ ও মাংস উৎপাদন গত এক দশকে যথাক্রমে ২.১৫ গুণ এবং ১.৫৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অউই এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১.৬০ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতের এবং ৩.৫২ শতাংশ মৎস্য খাতের অবদান। তবে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পাচ্ছে, ফলে ক্রমাগতভাবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে খাদ্য শস্যের জন্য মোট আবাদযোগ্য জমির ০.৩৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যার পরিমাণ ছিল ১.১২ লক্ষ একর। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সেচ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, শস্য বহুমুখীকরণ, উচ্চমূল্য ফসল চাষ এবং কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের কৃষি খাতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষিনির্ভর।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র প্রভিশনাল হিসাবানুযায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে জিডিপিতে কৃষির অবদান ১০.৯৪%। শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কৃষি খাতের পরোক্ষ অবদান রয়েছে। বার্ষিক লেবার ফোর্স সার্ভে ২০২৪ (সাময়িক) অনুযায়ী দেশের মোট শ্রমজীবীর ৪৬ শতাংশ প্রত্যক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
এমনকি পরিবেশ বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায়ও কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করতে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থার বিকল্প নেই। কৃষি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং দেশের বিস্তৃত গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। দেশের টেকসই উন্নয়নে কৃষি খাত সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে পারে। এ লক্ষ্যে কৃষি খাতে পর্যাপ্ত ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ প্রতি অর্থবছর দেশের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করে থাকে।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কৃষি খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৩৯ হাজার কোটি টাকার কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যা এ বছর ২.৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)