শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২


ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট পাকিস্তান?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত:৫ জুলাই ২০২৫, ১৪:০১

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আরও বড় আকারের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এমনকি পাকিস্তান হয়ে উঠতে পারে পরবর্তী আঞ্চলিক সংকটের কেন্দ্রে—এমন সতর্কবার্তাও এসেছে কয়েকটি পশ্চিমা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং মিডিয়া থেকে।

অধ্যাপক জেফ্রি শ্যাক্স প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষের নতুন দফা শুরুর পর আমরা কি আরও বিস্তৃত এক আঞ্চলিক যুদ্ধের মুখোমুখি?’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অঞ্চলে পরাশক্তিগুলোর ভূরাজনৈতিক স্বার্থ এবং আধুনিক যুদ্ধের ধরন পাল্টে যাওয়ায় পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে। ইউক্রেন-রাশিয়া এবং ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ এখন আর শুধু সামরিক শক্তি প্রদর্শনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এতে যোগ হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর গোপন অভিযান এবং শত্রু রাষ্ট্রের ভেতরে এজেন্ট মোতায়েন করার মতো কৌশল।

উল্লেখযোগ্য দুটি সাম্প্রতিক অভিযান হলো ইউক্রেনের ‘অপারেশন স্পাইডারওয়েব’ এবং ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। ইউক্রেন এ অভিযানে ৪০টিরও বেশি কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের ভেতরে গিয়ে পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে। টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন বলছে, মোসাদ ইরানে একটি ড্রোন ঘাঁটি স্থাপন করেছিল এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য সশস্ত্র কমান্ডো পাঠিয়েছিল।

এদিকে পশ্চিমা মিডিয়ায় এখন নতুন এক ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে—পাকিস্তানকে ইসরায়েলের সম্ভাব্য পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

পাকিস্তানকে নিয়ে কেন এই আশঙ্কা?
পূর্ববর্তী অনেক ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় নেতাসহ পশ্চিমা বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানকে ‘অস্থিতিশীল রাষ্ট্র’ ও ‘পারমাণবিক হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করে আসছেন। সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দুটি ইসলামপন্থী চরমপন্থী রাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা—প্রথমটি ইরান, দ্বিতীয়টি পাকিস্তান।’

১৯৮১ সালে ইসরায়েল যখন ইরাকের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করে, তখন থেকেই পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে সরব ভূমিকা নিতে শুরু করে তারা। ‘ইসলামিক বোমা’ শব্দটি তখন থেকেই পশ্চিমা মিডিয়ায় ভয় ছড়ানোর হাতিয়ার হয়ে ওঠে। অথচ কখনো ‘ইহুদি বোমা’ বা ‘খ্রিস্টান বোমা’ শব্দ কেউ ব্যবহার করেনি—যদিও এসব ধর্মের অনুসারী দেশগুলোর কাছেও পারমাণবিক অস্ত্র আছে।

সম্প্রতি ‘অ্যাস্পেন আইডিয়াস ফেস্টিভ্যাল’-এ এক আলোচনায় অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন অ্যাডমিরাল মাইক মুলেনকে জিজ্ঞেস করা হয়, কোন দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি—ইরান না পাকিস্তান? উত্তরে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত পাকিস্তান।’ এই বক্তব্যের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের পশ্চিমা আশঙ্কা যে, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ‘সন্ত্রাসীদের হাতে’ চলে যেতে পারে।

এই বক্তব্য একা মুলেনের নয়। বহু মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সামরিক বিশ্লেষকই পাকিস্তানকে ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ ও ‘সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক’ বলে চিহ্নিত করে আসছেন। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের প্রতিবেদন The Agonizing Problem of Pakistan’s Nukes—এ বিষয়টি খোলাখুলি উঠে এসেছে।

পরবর্তী যুদ্ধ পাকিস্তানে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা ও ইসরায়েলি জোট যদি ইরান নিয়ে সাময়িকভাবে পিছু হটে, তবে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে পাকিস্তান। কারণ, যুদ্ধ যে শুধু রাজনৈতিক নয়, একধরনের লাভজনক ব্যবসাও। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে সেই লাভ আরও বিস্তৃত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারত হয়তো পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ব্যবহার করে ড্রোন হামলা বা ‘স্মার্ট আক্রমণ’ চালাতে পারে, যেমনটি ইউক্রেন করেছে রাশিয়ার ওপর বা ইসরায়েল করেছে ইরানে।

এছাড়া, ভারত-ইসরায়েল ঘনিষ্ঠতা ও উভয় নেতার—নরেন্দ্র মোদি ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর—উগ্র জাতীয়তাবাদী অবস্থান এই আশঙ্কাকে আরও জোরদার করছে। দুজনই ‘বৃহত্তর রাষ্ট্র’ গঠনের স্বপ্ন দেখেন এবং ধর্মীয় সংখ্যাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন।

পাকিস্তান কি টার্গেট?
বিশ্লেষকদের মত, পশ্চিমা মিডিয়া আবারও সেই পুরনো কৌশল—‘একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে হলে প্রথমে তাকে হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করো’—চালু করেছে। সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন, লেবানন, সুদান, ইরানের পর এখন টার্গেট পাকিস্তান?

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যেমন বেলুচ লিবারেশন আর্মি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। আশঙ্কা রয়েছে, এসব গোষ্ঠীর মাধ্যমে পাকিস্তানে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা হতে পারে।

অধ্যাপক সুশান্ত সিং সতর্ক করে বলেছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দু জাতীয়তাবাদ ও মুসলিমবিরোধী উস্কানি ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

শান্তির বার্তা
তবে যুদ্ধ নয়, জনগণ চাইছে শান্তি। ইসরায়েলি বার্তাপত্র আটলান্টিক জানিয়েছে, ‘৭০ শতাংশ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগ চান।’ এশিয়া টাইমস বলছে, ‘ভারতের অনেক ভোটার মোদির ঘৃণার রাজনীতি আর পছন্দ করছেন না।’

বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহু ও মোদির নেতৃত্বে দক্ষিণ ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে যে উগ্র আক্রমণাত্মক কৌশল চলছে, তা বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।

সূত্র: ডেইলি সাবাহ, টাইমস অব ইসরায়েল, আটলান্টিক, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন, এশিয়া টাইমস

ডিএস /সীমা

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৩:৫০ ভোর
যোহর ১২:০৩ দুপুর
আছর ০৪:৪৩ বিকেল
মাগরিব ০৬:৫৪ সন্ধ্যা
এশা ০৮:১৬ রাত

শনিবার ৫ জুলাই ২০২৫