শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
রাশিয়াকে ইউরোপে হামলা চালানো থেকে বিরত রাখতে ন্যাটোর অস্ত্রভাণ্ডারে আরও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি হবে, কারণ মস্কো শিগগিরই এ ধরনের অস্ত্রের উৎপাদন বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেছেন একজন মার্কিন সেনা জেনারেল।
রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধের সময় দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে যে সফলতা পেয়েছে, তা পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে স্পষ্ট করেছে যে শত্রুপক্ষের গভীরে থাকা কমান্ড পোস্ট, পরিবহন কেন্দ্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ স্থল ধ্বংস করতে এসব অস্ত্র অপরিহার্য।
জার্মানির উইসবাডেনের একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল জন র্যাফার্টি বলেছেন, “ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর সময়ের তুলনায় রাশিয়ার সেনাবাহিনী এখন আরও বড়। আমরা জানি, তারা দূরপাল্লার রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে। সুতরাং ন্যাটোর জন্য আরও সক্ষমতা অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের ওপর মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তুলেছে, এবং কিয়েভ তার আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করতে চাইছে।
সম্প্রতি র্যাফার্টি জার্মানির মেইঞ্জ-কাস্টেলে অবস্থিত মার্কিন সেনাবাহিনীর ৫৬তম আর্টিলারি কমান্ডের দায়িত্ব শেষ করেছেন, যা ২০২৬ সাল থেকে ইউরোপে অস্থায়ীভাবে মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সোমবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের সঙ্গে বৈঠকে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস নিশ্চিত করার চেষ্টা করবেন যে, জো বাইডেনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মধ্যে যেসব ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন চুক্তি হয়েছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরও সেগুলো কার্যকর থাকবে কিনা।
চুক্তিতে ১,৮০০ কিলোমিটার পাল্লার টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ৩,০০০ কিলোমিটার পাল্লার উন্নয়নাধীন হাইপারসনিক অস্ত্র ‘ডার্ক ঈগল’ মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে।
রাশিয়া জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনাকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি বলে দাবি করেছে। তবে ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশে হামলা চালানোর আশঙ্কা তারা নাকচ করে বলেছে, ন্যাটোর সম্প্রসারণই ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলার অন্যতম কারণ।
ইউরোপীয় পরিকল্পনা
অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষজ্ঞ এবং পিএইচডি গবেষক ফাবিয়ান হফম্যান ধারণা করেছেন, ন্যাটোর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার প্রায় ৯০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করে।
তিনি বলেছেন, দূরপাল্লার আঘাত হানার সক্ষমতা আধুনিক যুদ্ধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের প্রথম বছরেই যদি আপনার এমন অস্ত্র না থাকে, তাহলে আপনি সঙ্গে সঙ্গে বিপদে পড়বেন।
এই ঝুঁকি বুঝতে পেরে ইউরোপের ন্যাটো সদস্য দেশগুলো প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর দিকে এগিয়েছে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের কারণে ত্বরান্বিত হয়েছে।
কিছু ইউরোপীয় দেশের নিজস্ব দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থাকলেও সেগুলোর সংখ্যা ও পাল্লা সীমিত। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
ইউরোপের আকাশ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যেমন ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো, ফরাসি স্ক্যাল্প এবং জার্মান টরাসের পাল্লা কয়েক শত কিলোমিটার পর্যন্ত। ফ্রান্সের সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইল দে ক্রজিয়ার নাভাল (এমডিসিএন) এক হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম।
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইউরোপীয় অস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমবিডিএ তৈরি করে, যার শাখা ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালিতে রয়েছে।
ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড, ব্রিটেন এবং সুইডেন এখন ইউরোপীয় লং-রেঞ্জ স্ট্রাইক অ্যাপ্রোচ (ইএলএসএ) নামের একটি কর্মসূচির অধীনে দূরপাল্লার, ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে।
এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে চলতি বছরের মে মাসে ব্রিটেন এবং জার্মানি ২,০০০ কিলোমিটারের বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)