সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি : সংগৃহীত
দেশে সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশ মানুষ এখনো নিরক্ষর। এই নিরক্ষর জনগোষ্ঠী মূলত বিদ্যালয়বহির্ভূত বা ঝরে পড়া শিশু এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হচ্ছে এবং এই উপলক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।
রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে, যেখানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা বক্তব্য দেন।
'প্রযুক্তির যুগে সাক্ষরতার প্রসার' প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে আলোচনা সভা, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সম্মাননা এবং তারুণ্যের উৎসবসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয় যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাক্ষরতা কেবল অক্ষরজ্ঞান নয়, বরং মাতৃভাষায় পড়া, লেখা, অনুধাবন, যোগাযোগ এবং গণনাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে জ্ঞান প্রয়োগের সক্ষমতা অর্জন হলো প্রকৃত সাক্ষরতা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ প্রতিবেদন (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪) অনুযায়ী, দেশের সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৭.৯ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য তাদের সাক্ষরজ্ঞান ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা অত্যন্ত জরুরি। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন-২০১৪ অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুদের জন্য উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা এবং ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী নিরক্ষর নারী-পুরুষের জন্য সাক্ষরতা, জীবিকায়ন দক্ষতা ও জীবনব্যাপী শিক্ষার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এবং ১৯৭২ সাল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালিত হয়ে আসছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তির অন্যতম উপায় হলো সাক্ষরতা অর্জন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সাক্ষরতার সংজ্ঞায় ভিন্নতা থাকলেও ১৯৬৭ সালে ইউনেস্কো একটি সর্বজনীন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। তখন শুধু কেউ নাম লিখতে পারলেই তাকে সাক্ষর বলা হতো। পরবর্তীতে প্রায় প্রতি দশকেই এই সংজ্ঞায় পরিবর্তন এসেছে এবং ১৯৯৩ সালের একটি সংজ্ঞায় ব্যক্তিকে সাক্ষর হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়: নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য পড়তে পারা, নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারা এবং দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ হিসাব-নিকাশ করতে পারা।
স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাক্ষরতা এবং উন্নয়ন একই সূত্রে গাঁথা, এবং নিরক্ষরতা উন্নয়নের পথে একটি বড় বাধা। একটি টেকসই সমাজ গঠনের জন্য যে জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়োজন, তা কেবল সাক্ষরতার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)