মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫ আশ্বিন ১৪৩২


ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা নিয়ে যে পাঁচ প্রশ্নের জবাব নেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত:৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:০৮

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের অবসান ও সেখানে বন্দি সব ইসরয়েলি জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করতে ২০টি পয়েন্ট সম্বলিত নতুন একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পেশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সেই পরিকল্পনায় যুদ্ধাবসানের পর গাজা উপত্যকা শাসন বা সেখানকার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার ব্যাপারটিও গুরুত্ব পেয়েছে। নতুন প্রস্তাবে যুদ্ধ পরবর্তী গাজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নিজের নাম প্রস্তাব করেছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করার শর্তও উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবে।

ট্রাম্পের নতুন এই পরিকল্পনাকে ঘিরে ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। পরিকল্পনাটি পর্যালোচনা করে এই ৫ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। প্রশ্নগুলো হলো—

  • ১. কীভাবে শাসিত হবে গাজা

ট্রাম্পের নতুন পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, যুদ্ধের পর গাজার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি অরাজনৈতিক এবং টেকক্র্যাটভিত্তিক কমিটি গঠন করা। গাজায় নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত এই কমিটিই উপত্যকার যাবতীয় বিষয় দেখভাল করবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই গাজার প্রস্তাবিত অন্তবর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে নিজের নাম এবং সরকারপ্রধানের সহযোগী হিসেবে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নাম প্রস্তাব করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ব্লেয়ার মিলে ‘বোর্ড অব পিস’ নামের একটি কমিটি বা বোর্ড গঠন করবেন এবং যুদ্ধ শেষে গাজায় নতুন যে সরকার গঠিত হবে, সেটির কর্মকর্তাদের সবাই ট্রাম্প এবং ব্লেয়ারের অনুমোদনক্রমে সরকারে প্রবেশ করবেন।

  • ২. ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ কি গাজার অন্তর্বর্তী সরকারে যুক্ত হবে?

ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলে ক্ষমতাসীন ফিলিস্তিনি সরকার, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা পিএ-নামেও পরিচিত— তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো— পিএ-কে অবশ্যই নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংস্কার শেষ করতে হবে এবং নিরাপদ ও কার্যকরভাবে গাজার প্রশাসন পরিচালনা করার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। যতদিন এ দুই শর্ত পূরণ না হচ্ছে, ততদিন গাজার মূল ক্ষমতা থাকবে ‘বোর্ড অব পিস’-এর হাতে। কিন্তু কত দিনের মধ্যে এই শর্তগুলো পূরণ করতে হবে— সে সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা ট্রাম্পের প্রস্তাবনায় পাওয়া যায়নি।

  • ৩. গাজা-কে কি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে?

জাতিসংঘের প্রস্তাবিত দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নীতিতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে পশ্চিম তীর, গাজা এবং পূর্ব জেরুজালেমের সমন্বয়ে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।

কিন্তু ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি যেভাবে লেখা হয়েছে— তাতে মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে তিনি গাজাকে একটি স্বতন্ত্র ভূখণ্ড হিসেবে দেখতে চাইছেন। গাজা যে অখণ্ড ফিলিস্তিনের অংশ, ট্রাম্পের প্রস্তাবে তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক রাজনীতি বিশ্লেষক।

তাছাড়া ট্রাম্পের প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে বলেছেন, হামাস কিংবা পিএ— কারো দ্বারাই গাজা শাসিত হবে না। সোমবার হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেছেন তিনি।

  • ৪. গাজার নিরাপত্তার জন্য কী পদক্ষেপ?

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নতুন পরিকল্পনায় বলেছেন, গাজার নিরাপত্তার জন্য একটি নতুন অস্থায়ী সেনাবাহিনী গঠন করা হবে। বিভিন্ন দেশের সেনাদের সমন্বয়ে গঠন করা হবে সেই বাহিনী।

তবে এই পয়েন্টটিতে স্পষ্টতার যথেষ্ট অভাব আছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা। কারণ এই অস্থায়ী বাহিনী গঠনে কোন কোন দেশ সেনা পাঠাতে ইচ্ছুক কিংবা কোন কোন দেশকে সেনা পাঠানোর জন্য বিবেচনা করা হবে— এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা নির্দেশনা ট্রাম্পের প্রস্তাবে নেই।

  • ৫. ইসরায়েল কবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে?

গাজায় শান্তি স্থাপনের একটি অপরিহার্য অংশ হলো উপত্যকা থেকে সব ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার। ট্রাম্পের পরিকল্পনায় এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, গাজার সার্বিক পরিস্থিতি, মাইলফলক এবং সময়সীমার ওপর নির্ভর করে সেনা প্রত্যাহারের সময় নির্ধারণ করা হবে।

কিন্তু এখানেও যথেষ্ট অস্পষ্টতা আছে। কারণ গাজার ‘সার্বিক পরিস্থিতি’ কবে নাগাদ ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার উপযোগী অবস্থায় পৌঁছাতে পারে, সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রস্তাবে নেই। অর্থাৎ সংক্ষেপে বললে, গাজা থেকে কবে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার করা হতে পারে— এ সংক্রান্ত সময়সীমা এড়িয়ে গেছেন ট্রাম্প।

ফিলিস্তিন কি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে?

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে গত ২২ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ দপ্তরে বৈশ্বিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সম্মেলনে এবং সম্মেলনের আগে ও পরে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, কানাডাসহ বেশ কয়েকটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সেই সম্মেলন বয়কট করেছিল

মঙ্গলবারের সম্মেলনে ২২ সেপ্টেম্বরের সম্মেলন এবং ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ব্যাপারটিকে ‘বোকামিপূর্ণ’ উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, “আমাদের অনেক মিত্র দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা একটা বোকামিপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল…কিন্তু আমি মনে করি যে তারা গাজায় যা ঘটছে, তা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়েই এ পদক্ষেপ নিয়েছে।”

ট্রাম্পের প্রস্তাবে যদিও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তবে এখানেও সেই একই সমস্যা— অস্পষ্টতা এবং ধোঁয়াশা। কোনো সময়সীমা তিনি দেননি।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “যখন গাজার পুনর্গঠন ও উন্নয়ন গতিশীল হবে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ সংস্কার কার্যক্রম বিশ্বাসযোগ্যভাবে মান অর্জনে সক্ষম হবে, তখনই ফিলিস্তিনের জনগনের স্বাধিকার ও রাষ্ট্রগঠনের ব্যাপারটি প্রাসঙ্গিক হবে এবং আমরা ফিলিস্তিনিদের আকাঙক্ষাকে স্বীকৃতি দেবো।”

সূত্র : আলজাজিরা

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ৪:৩৩ ভোর
যোহর ১১:৫১ দুপুর
আছর ৪: ১২ বিকেল
মাগরিব ৫: ৫৫ সন্ধ্যা
এশা ০৭: ০৮ রাত

মঙ্গলবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫