শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করণীয় নিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
শনিবার (২৪ মে) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রধান উপদেষ্টাকে ৬টি পরামর্শ দিয়েছেন।
পরামর্শগুলো হলো-
১. যেহেতু বড় রাজনৈতিক দলসহ কেউই আপনার পদত্যাগ চাচ্ছে না, আপনি পদত্যাগের চিন্তা আর মাথায় আনবেন না। শিরদাঁড়া উঁচু করে চলুন।
২. আপনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজনটা শুরু করুন।
৩. ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে গঠিত জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের বেশকিছু বিষয়ে ঐক্যমত পেয়েছে। আমার দৃষ্টিতে এগুলো বড় অর্জন যেমন- রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, প্রধানমন্ত্রী পদের ২ বারের মেয়াদ, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন-দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা সুপ্রতিষ্ঠা, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এগুলোর বিষয়ে ফাইন টিউনিং করে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একত্রে বসে চূড়ান্ত করতে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনকে বলুন।
৪. ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া বেশ এগিয়েছে। বিচার কাজ সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে। যদিও আমি মনে করি, পুরো বিচারটি সরাসরি সম্প্রচার করা উচিৎ। আপনার ঘোষিত নির্বাচনী সময়সীমার মধ্যে বিচার প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে একজন আইনজীবী হিসেবে বিশ্বাস করি।
৫. দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চারটি প্রতিষ্ঠান-দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ, সিআইডি ও এনবিআর বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে, অনেককে বিদেশে যেতে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। আবার বিদেশে পাচার হওয়া টাকারও সন্ধান পেয়েছে/পাচ্ছে। এগুলো বড় অগ্রগতি। কিন্তু প্রচলিত বিচার পদ্ধতি অনুসরণ করে এই টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা ও দোষীদের শাস্তি দেয়া সময় সাপেক্ষ। এজন্য আর্থিক অপরাধের জন্য বিকল্প বিচার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছিলেন, তিনি ও মাননীয় প্রধান বিচারপতি বর্ণবাদ পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকা যে সত্য ও জবাবদিহিতা কমিশন করেছিলেন তার অভিজ্ঞতা নেবেন। তারা উভয়ে এখন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করছেন। এটা ভালো কথা কিন্তু ১/১১ এর পরে বাংলাদেশেও এমনটি করা হয়েছিল। সফল হয়নি বরং মানুষ উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছেন। এবার তেমন কিছু করতে চাইলে আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে।
৬. যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন আর যেহেতু সরকারের দুই উপদেষ্টা-স্বাস্থ্য ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও এপিএসরা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে দুদকের তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এই উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দিতে অথবা তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন। আরও যারা অথর্ব আছেন বলে মনে হয়, তাদেরকেও বাদ দিয়ে নতুন উদ্যোমী কাউকে এনজিওর বাইরে থেকে নিন।
ব্যারিস্টার কাজল বলেন, আমার বিশ্বাস এই কাজগুলো এখনই শুরু করলে এই সরকারের প্রতি জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত ম্যান্ডেট ‘নির্বাচন-সংস্কার-বিচার’ সবকিছুই স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)