রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
মামলার প্রবহমান ও অস্বাভাবিক চাপ কমানোর জন্য আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার চেয়ারম্যান ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে দ্রুত কাজ করছে আইন মন্ত্রণালয়।’
শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর বেইলি রোডে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সম্মেলন কক্ষে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আদালতে মামলার যে অস্বাভাবিক চাপ, তা শুধু বিচারিক কাঠামোকে নয়, ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সম্ভাবনাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। নতুন মামলার চাপ কমানো সময়ের দাবি। এ চাপ কমাতে হলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য মামলা দায়েরের পূর্বে আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা গুরুত্বপূর্ণ।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রতিবছর বাংলাদেশের আদালতগুলোতে দায়েরকৃত প্রায় পাঁচ লাখ মামলার মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার মামলা সরকারি লিগ্যাল এইড সার্ভিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। মামলা নিষ্পত্তিতে আদালতে যে সময় ব্যয় হয়, তার এক-দশমাংশ সময়ের মাধ্যমে লিগ্যাল এইড অফিসগুলোতে এসব বিরোধ ৯০ ভাগ ক্ষেত্রে পক্ষগুলোর পূর্ণ সন্তুষ্টিতে নিষ্পত্তি করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি আইনগত সহায়তা কর্মসূচিকে আরও সম্প্রসারিত, দক্ষ ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারলে মধ্যস্থতার মাধ্যমে মীমাংসিত মামলার সংখ্যা এক থেকে দুই লাখে নিয়ে আসা যাবে। এটি করা গেলে মামলা দায়েরের পরিমাণ ৪০ শতাংশ কমে যাবে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘প্রথম থেকেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা সংস্কার কার্যক্রমের ব্যাপারে তিনটি টার্গেট করেছি। এর প্রথমটি হচ্ছে, দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে ও অল্প খরচে মামলার নিষ্পত্তি করা। এই লক্ষ্যে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা পরিবর্তন করেছি, সেটি হলো- দেওয়ানি কার্যবিধির পরিবর্তন । সেইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছি। আশা করি, আগামী এক মাসের মধ্যে এটি আইন আকারে পাস করতে পারব।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো-ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং এর জন্য আমরা ডিজিটালাইজেশনের কথা চিন্তা করছি। এ লক্ষ্যে আমাদের বিচারকদের উচ্চ পর্যায়ের প্রশিক্ষণের কথা ও তাদের একাউন্টেবিলিটি বাড়ানোর কথা চিন্তা করছি। বিচারক বা আইন বিভাগে কর্মরতদের সবার সম্পদের বিবরণী আমরা সংগ্রহ করেছি, সেটা নিয়ে আমরা ভবিষ্যতে কাজ করব। সেইসঙ্গে আইনজীবীদের সঙ্গে কাজ করে আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তৃতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, মামলার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া। এই লক্ষ্য পূরণ করতে আমরা আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার অধীনে সংশ্লিষ্ট যে আইনগুলো আছে, সেগুলো পরিবর্তন করতে যাচ্ছি।’
সভায় জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার পক্ষ থেকে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া উপস্থাপনা করা হয়। প্রস্তাবিত এ সংশোধনীতে আপসযোগ্য ও ছোট পারিবারিক, দেওয়ানি, ফৌজদারি ও চেকের মামলাগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে মামলাপূর্ব মধ্যস্থতা কার্যক্রমের আওতায় আনার প্রস্তাব করা হয়।
ফলে এ ধরনের মামলাগুলো আদালতে দায়ের করার পূর্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে আবশ্যিকভাবে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে আপসের চেষ্টা করতে হবে।
এছাড়া জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধি, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ ও বিশেষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবীদের বিশেষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্যানেলভুক্তকরণ এবং এ আইনের মধ্যস্থতা-সেবাকে আরও ফলপ্রসূ, কার্যকর ও জনবান্ধব করার উদ্দেশে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ এবং আইনগত সহায়তা প্রদান (আইনি পরামর্শ ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) বিধিমালা, ২০১৫-সহ সংশ্লিষ্ট বিধি-প্রবিধানমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার পরিচালক এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা। এছাড়া ছিলেন ঢাকা জেলার লিগ্যাল এইড অফিসার, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা, ইউএনডিপি বাংলাদেশ, জিআইজেড বাংলাদেশ, আইএলও, মাদারীপুর লিগ্যাল এইড অ্যাসোসিয়েশন, ব্লাস্ট, ব্র্যাক ও প্রশিকার প্রতিনিধিরা।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিভিন্ন দিক নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এ সময় আইন উপদেষ্টা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত আকারে তাদের এসব সুপারিশ ও পরামর্শ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা বলেন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)