রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
চলছে মধুমাস। বাজারে মিলছে রসালো মিষ্টি স্বাদের লিচু। ছোট-বড় প্রায় সবারই পছন্দের ফলের তালিকার রয়েছে এটি। তবে এই লিচু খেতে হবে বুঝেশুনে। নয়ত মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। লিচুতে আছে এমন সব বিষাক্ত পদার্থ যা শরীরে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে!
২০১১ সালে ভারতের বিহারে লিচু থেকে এনসেফেলাইটিসের সংক্রমণ হয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। চিকিৎসকদের মতে, লিচুর টক্সিন মস্তিষ্কে চলে গেলে জ্বর, খিঁচুনি, পেটের সংক্রমণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে থাকেন শিশু ও বয়স্করা। তাই সাবধান হওয়া জরুরি।
লিচুর উপকারিতা ও অপকারিতা:
সাধারণ উপকারী ফল। এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ, যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। লিচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা শরীরের জন্য ভালো।
এছাড়াও লিচুতে আছে অলিগোনল যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ নাইট্রিক অক্সাইড থাকলে হার্টে রক্ত চলাচল ভালো হয়। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
লিচুতে ক্যালোরি খুব কম থাকে আর ফাইবার থাকে বেশি। তাই পরিমিত পরিমাণে লিচু খেলে হঠাৎ শর্করা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। পুষ্টিবিদদের মতে, এক কাপ লিচুতে ক্যালোরির পরিমাণ ১২৫। তাই লিচু খেলে চট করে ওজন বাড়ারও আশঙ্কা থাকে না। লিচুতে থাকে ফ্ল্যাভেনল, যা শরীরের প্রদাহ কমায়।
ভালো দিক তো গেল। এবার আসা যাক খারাপ দিকে। লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন এ ও মিথিলিন সাইক্লোপ্রোপাইল-গ্লাইসিন (এমসিপিজি) নামের টক্সিন থাকে। এই দুই রাসায়নিক বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে বিষক্রিয়া হতে পারে।
ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, লিচু যদি অধিক পরিমাণে খাওয়া হয় এবং খালি পেটে খাওয়া হয়, তাহলে ওই দুই রাসায়নিকের প্রভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করেই কমে যাবে। দেখা দেবে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ। যা থেকে জ্বর, ঘন ঘন বমি, খিঁচুনি, মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। মস্তিষ্কে প্রদাহ শুরু হতে পারে। খাদ্যনালিতে সংক্রমণও হতে পারে। এমনকি রোগ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে রোগীর মৃত্যু অবধি হতে পারে।
লিচুর টক্সিন থেকে লিভারের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। যারা লিভারের কোনো জটিল অসুখে আগে থেকেই ভুগছেন, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর লিচু খান।
লিচু কেনার সময়ে কী দেখে কিনবেন:
কাঁচা বা আধপাকা, পচন ধরে যাওয়া লিচু কিনলে বিপদ হতে পারে। ঠিকমতো না-পাকা লিচুতে হাইপোগ্লাইসিনের মাত্রা থাকে বেশি। যার প্রভাবে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। এছাড়া লিচুর বীজ ও শাঁসে এমসিপিজি রাসায়নিক থাকে, যা থেকে এনসেফেলাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
লিচু কখন খাওয়া উচিত:
লিচু কখনও খালি পেটে খাবেন না। এতে শরীরে বিষক্রিয়া হতে। সকালে কিছু খাবার খেয়ে তারপর লিচু খেতে পারেন। রাতের বেলায় লিচু খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। শিশুর যদি অ্যালার্জির ধাত থাকে, অপুষ্টিজনিত রোগ থাকে কিংবা কোনো ক্রনিক অসুখ থাকে, তাহলে লিচু না খাওয়ানোই ভালো।
দিনে ৭-৮টির বেশি লিচু খাওয়া উচিত নয়। ডায়াবেটিস থাকলে ভরা পেটে ৬টি লিচু খাওয়াই যথেষ্ট। এর বেশী খাবেন না। বিকেলের পর আর লিচু না খাওয়াই ভালো।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)