বৃহঃস্পতিবার, ৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
নাম ল্যাপটপ। তাই বলে কোলের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্যাজেটটিকে নিয়ে বসে থাকা চলবে না। মোবাইল ফোনও তেমনি বেশিক্ষণ রাখা যাবে না পকেটে।
এসব কাজে ক্ষতি হবে আপনারই। ল্যাপটপের চাপ ও তাপে এবং মোবাইলের রেডিয়েশন বিকিরণে শুক্রাশয়ের হাল হবে খারাপ। কমবে সন্তানধারণ ক্ষমতা। এমনকি এমন অভ্যাসে বাড়ছে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি। সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট অফ রিপ্রোডাকটিভ মেডিসিনের গবেষণায় এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
টেস্টিস বা শুক্রাশয়ের উপরে বর্ধিত অথবা দীর্ঘস্থায়ী চাপ যে স্পার্ম বা শুক্রাণু সংখ্যা ও গুণমান কমায়, এ বিষয়ে আগেও অনেক আলোচনা হয়েছে। যারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন কিংবা সারাক্ষণ কোলের ওপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করেন, তাদের ওপর করা পরীক্ষায় এই ব্যাপারে জোরালো সমর্থন পাওয়া গিয়েছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স রিসার্চ ইউনিটের গবেষকরা ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী প্রায় ১২০০ পুরুষের শুক্রাণুর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছেন। এতে দেখা গেছে, যারা পাঁচ ঘণ্টার বেশি কোলে ল্যাপটপ রাখেন বা প্যান্টের পকেটে মোবাইল রেখে দেন, তাদের শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণমান, দুটোই কম। এই ১২০০ জনের মধ্যে অন্তত ৭০৮ জন অ্যাজোস্পার্মিয়ার শিকার। এটি এমন একটি অবস্থান যেখানে শুক্রাণুর উৎপাদন প্রায় বন্ধই হয়ে যায়।
ল্যাপটপ-মোবাইল কীভাবে বন্ধ্যাত্বে প্রভাব ফেলে?
শুক্রাশয়ের ব্যাপারটা বরাবরই অন্য রকম। এই অঙ্গ শরীরের বাইরে থাকে বিশেষ কারণে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে ২-৪ ডিগ্রি কম থাকে। এবং সেটা থাকাই বাঞ্ছনীয়। এভাবে শুক্রাণুর উৎপাদন স্বাভাবিকভাবে হয়। এই কারণেই শুক্রাশয় শরীরের ভিতরে থাকে না। শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা যদি বৃদ্ধি পায়, তাহলে শুক্রাণুর উৎপাদনে প্রভাব পড়ে। কোলে ল্যাপটপ নিয়ে বসলে তিনভাবে ক্ষতি হবে-
১. ল্যাপটপের চাপে শুক্রাশয়ের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে কমবে শুক্রাণুর গুণমান।
২. ল্যাপটপ থেকে নির্গত তাপ শুক্রাশয়ের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বাড়িয়ে দেবে। ফলে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হবে।
৩. ল্যাপটপ থেকে যে তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত হয়, তা যদি দিনের পর দিন সরাসরি ধাক্কা দেয়, তাহলে শুক্রাশয়ের উৎপাদন ক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এই কারণেই গরমের সময়ে বেশি আঁটসাঁট জিনস, অতিরিক্ত চাপা অন্তর্বাস পরতে মানা করা হয়। বিশেষ করে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা থাকলে এই পরামর্শই দেন চিকিৎসকরা।
একইভাবে ক্ষতি করে মোবাইলও। চিকিৎসকের মতে, মোবাইলে কম শক্তির তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ তৈরি হয়। তবে তা শরীরের ক্ষতি করে। পকেটে যদি ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেউ মোবাইল রেখে দেন, তাহলে সেই তরঙ্গ শুক্রাশয়ে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়াকে নষ্ট করতে থাকবে। শুক্রাণুর গতিশীলতা ধীরে ধীরে কমবে।
প্রতিদিন প্রায় ১২ কোটির বেশি শুক্রাণু তৈরি হয় শুক্রাশয়ে। শুক্রাণুর কোষের ভেতর থাকে মাইটোকনড্রিয়া, যা তার সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস। আর এর লেজ শুক্রাণুকে সাঁতার কেটে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
ল্যাপটপ ও মোবাইলের তাপমাত্রা এবং বিকিরণ শুক্রাণুর এই সহজাত ক্ষমতাকে নষ্ট করতে থাকে। এসব গ্যাজেটের বিকিরণে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন-এর সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
তবে শুধু ল্যাপটপ বা মোবাইলকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী। মদ্যপান, ধূমপান কিংবা মাদক সেবন শুক্রাণুর উৎপাদন প্রক্রিয়া বা স্পার্মাটোজেনেসিসের ক্ষতি করে। তাই বন্ধ্যত্বের সমস্যার সমাধানে চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রার ধারা বদলানোও জরুরি।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)