বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২


নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখতে ইইউ দল ঢাকায় আসছে ১৮ সেপ্টেম্বর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:৬ আগষ্ট ২০২৫, ১৪:০৮

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল ঢাকা সফরে আসছে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর।

দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইইউর এই পর্যবেক্ষক দলে তিনজন বিদেশি এবং চারজন স্থানীয় মিলিয়ে সাতজন থাকবেন এবং দলটি আগামী ৭ অক্টোবর বাংলাদেশে তাদের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ মিশন শেষ করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, ইইউর পর্যবেক্ষক দলটি বাংলাদেশ সফরকালে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ পরিবেশ রয়েছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করবে। আর এই অনুসন্ধানী সফরের ভিত্তিতে ইইউ সিদ্ধান্ত নেবে, তারা বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কি না। সফরকালে দলটি নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে।

এছাড়া প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্রাসেলসের (বেলজিয়ামের রাজধানী, যেখানে ইইউর সদর দপ্তর) একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম সাধারণত নিজস্ব মূল্যায়ন ও স্বাগতিক দেশের অনুমতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এবারও উভয়পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে তারা পর্যবেক্ষণে আসছেন।
কীভাবে কাজ করবে ইইউর পর্যবেক্ষক দল: সাধারণত দুই ধাপে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে ইইউ। প্রথম ধাপে পাঠায় একটি প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল। এবার ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যারা আসছেন তারা মূলত নির্বাচনের পরিবেশ, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করবে। যে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইইউ সিদ্ধান্ত নেবে, তারা ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কি না।

এই প্রক্রিয়ায় তারা নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যমকর্মী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। দলটি মূলত নির্বাচনের স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, সহিংসতা ও ভয়ের পরিবেশ আছে কি না—এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে।

বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গে ইইউর অবস্থান: বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সুশাসন নিয়ে ইইউ বরাবরই সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে আগ্রহী। তারা মনে করে, একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।

ইইউ বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়েছে, বিশেষ করে ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে। তবে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তারা পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠায়নি, বরং একটি ছোট অনুসন্ধানী দল পাঠিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছিল। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম বেশ আলোচিত ছিল। তারা শুরুতে আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল আর পাঠায়নি।

ইইউ সাধারণত নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগে প্রাক-নির্বাচনী দল পাঠায়, যাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতির জন্য। প্রথমে প্রাক-নির্বাচনী দল রাজনৈতিক পরিবেশ, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, লজিস্টিক সুবিধা এবং বাজেট কাঠামো মূল্যায়ন করে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন তৈরি করে। যে প্রতিবেদন ইইউ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়, যেখানে তা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়—পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানো হবে কি না।

যদি পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে দ্বিতীয় ধাপে পর্যবেক্ষকদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, ভিসা প্রক্রিয়া, যাতায়াত এবং মাঠপর্যায়ে কাজের প্রস্তুতির জন্য কয়েক মাস সময় প্রয়োজন হয়। এই প্রস্তুতি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হলে পর্যবেক্ষক দলকে আগেভাগেই সফর করতে হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইইউ প্রাক-নির্বাচনী দল বাংলাদেশে সফর করেছিল জুলাই ২০২৩-এ, অর্থাৎ নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস আগে। যদিও এখনো ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি।


তবে গত ১৩ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার লন্ডন সফরকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক শেষে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় আগামী বছরের রমজানের আগে হওয়ার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেন। যদিও এখনো নির্বাচন কমিশন (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি।

আ.লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধকে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে বাধা মনে করতে পারে ইইউ: ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তর্বর্তী সরকারের এক ঘোষণায় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। দলটির অনলাইনে উপস্থিতি, রাজনৈতিক সভা, এমনকি নির্বাচনী প্রস্তুতিও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে। নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। ফলে দলটি পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কি না, তা নিয়ে ইইউ প্রশ্ন তুলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ইইউ যে প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে, তার উদ্দেশ্য হবে নির্বাচনী পরিবেশ, অংশগ্রহণমূলকতা এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা মূল্যায়ন করা। তবে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া এই পর্যবেক্ষকদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, ইইউ সাধারণত এমন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে, যেখানে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করে এবং গণতান্ত্রিক পরিসর বজায় থাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষক দল যদি মনে করে যে সম্ভাব্য নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে না, তাহলে তারা পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানো থেকে বিরত থাকতে পারে। তারা নির্বাচনকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ ঘোষণা করতে পারে, যদি প্রধান দলগুলো অংশগ্রহণ না করে।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:১০ ভোর
যোহর ১২:০৫ দুপুর
আছর ০৪:৪২ বিকেল
মাগরিব ০৬.৪২ সন্ধ্যা
এশা ০৮:০০ রাত

বুধবার ৬ আগস্ট ২০২৫