সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৮ কার্তিক ১৪৩২
ছবি : সংগৃহীত
ভ্যাকসিন আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম একটি আশির্বাদ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের মধ্যে ভ্যাকসিনকে সবার উপরে স্থান দেওয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা বলছে ভ্যাকসিনের কারণে পঞ্চাশ বছরে কমপক্ষে ১৫.৪ কোটি মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে।
ভ্যাকসিনের যত প্রযুক্তি
এ পর্যন্ত ভ্যাকসিন তৈরিতে প্রধান ছয়টি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এগুলো হলো, লাইভ-অ্যাটেনুয়েটেড, ইনঅ্যাক্টিভেটেড, সাবইউনিট, টক্সয়েড, এমআরএনএ এবং ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিন।
লাইভ-অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাকসিনে রোগের জন্য দায়ী জীবন্ত কিন্তু দুর্বল জীবাণু (ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া) ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ভ্যাকসিনগুলো শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। তবে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের জন্য এটি উপযুক্ত নয়। হাম, মাম্পস, রুবেলা (MMR), জলবসন্ত (চিকেনপক্স) এবং রোটাভাইরাস ভ্যাকসিন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি।
ইনঅ্যাক্টিভেটেড (নিষ্ক্রিয়) ভ্যাকসিনে তাপ, রাসায়নিক বা বিকিরণ দ্বারা মেরে ফেলা জীবাণু ব্যবহার করা হয়। ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত নিষ্ক্রিয় জীবাণু রোগ তৈরি করতে পারে না, কিন্তু শরীর এ নিষ্ক্রিয় জীবাণুগুলো সক্রিয় হিসেবে বিবেচনা করে এবং শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। সাধারণত এ ধরনের ভ্যাকসিনের জন্য বুস্টার শট প্রয়োজন হয়। হেপাটাইটিস এ, পোলিও (ইনজেকশন) এবং বেশিরভাগ ফ্লু শট এ প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি।
টক্সয়েড ভ্যাকসিনে নিষ্ক্রিয় টক্সিন ব্যবহার করা হয়, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে টক্সিনকে প্রতিরোধ করার জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শেখায়। যেমন ডিপথেরিয়া এবং টিটেনাস ভ্যাকসিন এক প্রকারের টক্সয়েড ভ্যাকসিন।
সাবইউনিট, রিকম্বিন্যান্ট, পলিস্যাকারাইড এবং কনজুগেট ভ্যাকসিন ভ্যাকসিনে জীবাণুর একটি নির্দিষ্ট অংশ (যেমন প্রোটিন বা শর্করা) ব্যবহার করে। তাই এটি বেশ নিরাপদ প্রযুক্তি। হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) এবং নতুন আবিষ্কৃত টাইফয়েড ভ্যাকসিন এ প্রযুক্তির মধ্যে পড়ে।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন একটি অত্যাধুনিক নতুন প্রযুক্তির ভ্যাকসিন যেখানে মেসেঞ্জার আরএনএ (mRNA) ব্যবহার করে কোষকে ভাইরাসের প্রোটিন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। এই প্রোটিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে উৎসাহিত করে। ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি।
ভাইরাল ভেক্টর ভ্যাকসিনও একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভ্যাকসিন যাতে একটি নিরাপদ, পরিবর্তিত ভাইরাস (ভেক্টর) ব্যবহার করে জেনেটিক উপাদান কোষের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়, যা শরীরকে নির্দিষ্ট প্রোটিন তৈরি করতে শেখায়। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং ইবোলা ভ্যাকসিন এ প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি।
টাইফয়েড ভ্যাকসিনের বিভিন্ন প্রজন্ম এবং বাংলাদেশে টাইফয়েড ভ্যাকসিনের বাজার
প্রথম প্রজন্মের টাইফয়েড ভ্যাকসিনটি আবিষ্কৃত হয় ১৮৯৬ সালে। এটি ছিল ইনঅ্যাক্টিভেটেড (নিষ্ক্রিয়) প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ Salmonella Typhi ব্যাকটেরিয়াকে তাপ বা ফরমালিন দিয়ে নিষ্ক্রিয় করে এটি তৈরি কার হতো। এটি কার্যকর হলেও তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন জ্বর, ব্যথা ও মাথাব্যথা সৃষ্টি করত এবং এর সুরক্ষা মাত্র ৩ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
এরপর ১৯৮০-এর দশকে তৈরি হয় দ্বিতীয় প্রজন্মের টাইফয়েড ভ্যাকসিন যেটি ছিল সাব-ইউনিট পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন। এ প্রযুক্তিতে Salmonella Typhi ব্যাকটেরিয়ার কোষের বাইরে অবস্থিত ক্যাপসুল আবরণের ভিআই পলিস্যাকারাইড (Vi polysaccharide) অ্যান্টিজেন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
স্যানোফি পাস্তুর- এর Typhim Vi এবং গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন-এর Typherix ভ্যাকসিন ২য় প্রযুক্তির ভ্যাকসিন। বাংলাদেশের ইনসেপ্টা ফার্মার Vaxphoid ভ্যাকসিনটিও ভিআই পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিন যেটির বাজারমূল্য ৫০০ টাকা। ভি-আই পলিস্যাকারাইড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম, কিন্তু এটি ২ বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে কার্যকর নয় এবং মাত্র ২-৩ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়।
টাইফয়েডের তৃতীয় প্রজন্মের ভ্যাকসিন হলো লাইভ-অ্যাটেনুয়েটেড ভ্যাকসিন Ty21a (Vivotif) যেহেতু মুখে খাওয়া যায়। এই ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তুলনামূলকভাবে কম, কিন্তু এর অসুবিধা হলো এটি একাধিক ডোজে দিতে হয়, রেফ্রিজারেশনের প্রয়োজন হয় এবং ছয় বছরের নিচের শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়। এর ফলে ছয় মাস বয়স থেকে দেয়া যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবে এমন কোন টাইফয়েড ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা জরুরি ছিল।
চতুর্থ প্রজন্মের ভ্যাকসিন হলো টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (Typhoid Conjugate Vaccine বা TCV)। এতে Salmonella Typhi বা কাছাকাছি কোন ব্যাকটেরিয়ার (যেমন Citrobacter freundii) ভিআই পলিস্যাকারাইড অ্যান্টিজেন কোনো বাহক প্রোটিনের (যেমন tetanus toxoid বা CRM₁₉₇) সাথে যুক্ত করা হয়, যার ফলে এটি টি-সেল নির্ভরশীল প্রতিক্রিয়া বা ইমিউন মেমোরি সৃষ্টি করে।
টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন এক ডোজেই পাঁচ বছর বা তার বেশি সুরক্ষা দেয় এবং ৬ মাস বয়স থেকেই দেওয়া যায়। যদিও এর মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি, এটি বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ টাইফয়েড ভ্যাকসিন হিসেবে স্বীকৃত।
ভারত বায়োটেকের তৈরি Typbar-TCV এবং বায়োলজিক্যাল কোম্পানির TYPHIBEV টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন। Typbar-TCV থেকে TYPHIBEV ভ্যাকসিনটির পার্থক্য হলো এটি Citrobacter freundii ব্যাকটেরিয়ার ভিআই পলিস্যাকারাইড অ্যান্টিজেন ব্যবহার করা হয় এবং CRM₁₉₇ নামে একধরনের অবিষাক্ত ডিপথেরিয়ার মিউট্যান্ট টক্সিনের সাথে যুক্ত করে তৈরি করা হয়।
MedEx-এর তথ্য অনুযায়ী Typbar-TCV এবং TYPHIBEV বাংলাদেশের বাজারে যথাক্রমে রেনাটা ফার্মা এবং জনতা ট্রেডার্স বাজারজাত করে, যার বিক্রয়মূল্য যথাক্রমে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৩ হাজার ২১৯ টাকা (সূত্র: ১)। এ ভ্যাকসিন দুটি ৬ মাস থেকে তদুর্দ্ধ যে কেউ দিতে পারে।
বাংলাদেশে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনে কোন টিকা দেওয়া হয়?
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইউনিসেফ এবং গাভি-দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১২ অক্টোবর ২০২৫-এ শুরু হওয়া টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের চতুর্থ প্রজন্মের টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন বা টিসিভি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দেশে কোনো কোম্পানির তৈরি টিসিভি দেওয়া হচ্ছে তা অফিসিয়ালি প্রথম দিকে উক্ত প্রতিষ্ঠাগুলো পরিষ্কার করে কিছু বলেনি।
২১ অক্টোবর ২০২৫ দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘টাইফয়েড টিকা নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে, সরকার কী করছে’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয় দেশে ক্যাম্পেইনের জন্য যে কনজুগেট ভ্যাকসিনটি দেয়া হচ্ছে তা ভারতের ‘বায়োলজিক্যাল ই’-কোম্পানির, যেটির ব্র্যান্ড নাম TYPHIBEV। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে ভ্যাকসিনের ছবি শেয়ার করে বলেছেন এটি ‘বায়োলজিক্যাল ই’-কোম্পানির TYPHIBEV ভ্যাকসিন।
এ ভ্যাকসিনটি ৬ মাস থেকে তদুর্দ্ধ যে কেউ দিতে পারে এবং এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত।
ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ধাপগুলো কী এবং এতে কী দেখা হয়?
ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সাথে অন্য থেরাপিউটিক ড্রাগের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কিছু সাদৃশ্য থাকলেও বৈসাদৃশ্যই বেশি। যেমন ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়া হয় সুস্থ মানুষের ওপরে, অন্য দিকে থেরাপিউটিক ড্রাগের ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দেওয়া হয় কোনো নির্দিষ্ট রোগে অসুস্থ রোগীদের ওপরে। ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে ফোকাস দেওয়া হয় Safety বা নিরাপত্তা, কারণ এটি সুস্থ মানুষের ওপর দেওয়া হয়, কিন্তু থেরাপিউটিক ড্রাগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশ জোর দেওয়া হয় Efficacy বা কার্যকারিতা।
থেরাপিউটিক ড্রাগের মতো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরুর আগে কোনো ভ্যাকসিনের ফর্মুলা ল্যাবরেটরিতে কোষ বা টিস্যুর ওপর এবং প্রাণীদের (যেমন ইঁদুর, বানর) ওপর পরীক্ষা করা হয়। এই পর্যায়ে ভ্যাকসিনের প্রাথমিক নিরাপত্তা এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে কিনা তা দেখা হয়। এটিকে প্রি-ক্লিনিক্যাল ধাপ বলে।
প্রাণীতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগ শুরু হয়। মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের চারটি ধাপ রয়েছে।
প্রথম ধাপে সাধারণত ২০ থেকে ১০০ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবকের ওপরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে মানুষের শরীরে সেটির নিরাপত্তা পরীক্ষা এবং এর সঠিক মাত্রা (dosage) নির্ধারণ করা হয়। এই ধাপে দেখা হয় যে ভ্যাকসিনটি কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে কিনা। ১ম ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে ২য় ধাপের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২য় ধাপে কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবক বিশেষ করে যাদের উদ্দেশ্যে ভ্যাকসিন ডিজাইন করা হয়েছে (যেমন শিশু বা বয়স্ক ব্যক্তি) তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এই ধাপে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা আরও বিস্তারিতভাবে মূল্যায়ন করা হয় এবং প্রধানত এর ইমিউন প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে কতটা কার্যকর, তা পরীক্ষা করা হয়। বিভিন্ন বয়সীদের ওপর বিভিন্ন ডোজ পরীক্ষা করে দেখা হয়।
৩য় ধাপে হাজার হাজার (কখনো লক্ষাধিক) স্বেচ্ছাসেবক অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এটি কার্যকারিতা (efficacy) পরীক্ষার প্রধান ধাপ। এই ধাপে নিশ্চিত করা হয় যে ভ্যাকসিনটি নির্দিষ্ট রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে কতটা কার্যকর। অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয় এবং অন্য অংশকে প্লাসিবো (placebo) বা অন্য কোনো অনুমোদিত টিকা দেওয়া হয়। এ ধাপ সফল ভাবে উত্তীর্ণ হলে টিকা বাজারজাতের অনুমোদন দেওয়া হয়।
তবে সব ভ্যাকসিনকে বাজারজাত করার অনুমোদনের জন্য ৩য় ধাপ অর্থাৎ কার্যকারিতা (efficacy) পরীক্ষার ধাপটি সম্পন্ন করতে হয়না। যদি কোনো ভ্যাকসিনের একই রকম ভার্সনের আগে ৩য় ধাপ অর্থাৎ কার্যকারিতা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল দেয় তখন অনুমোদনকারী সংস্থা একই ধরনের নতুন কোনো ভ্যাকসিনের অনুমোদনের জন্য ইমিউনোব্রিজিং (Immunobridging) পদ্ধতি অনুসরণ করে।
ইমিউনোব্রিজিং এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পূর্বে অনুমোদিত এবং কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত একই ধরণের একটি রেফারেন্স ভ্যাকসিনের সাথে নতুন ভ্যাকসিনের ইমিউন প্রতিক্রিয়ার (immune response) তুলনা করে নতুন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্ধারণ করা হয়।
৪র্থ ধাপে বাজারজাত করা ভ্যাকসিনের পোস্ট-মার্কেটিং সার্ভিলেন্স বা অনুমোদন-পরবর্তী নজরদারি করা হয়। এখানে দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা হয়। খুব বিরল কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা এই ধাপে দেখা হয়।
TYPHIBEV ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রমাণের ৩য় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল কেন প্রয়োজন হয়নি?
TYPHIBEV ভ্যাকসিনের অনুমোদনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইমিউনোব্রিজিং পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। কারণ, কনজুগেট ভ্যাকসিন একটি প্রতিষ্ঠিত প্রযুক্তি এবং একই প্রযুক্তিতে তৈরি ভারত বায়োটেকের Typbar-TCV টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণে নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে (সূত্র: ২ )।
তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের শর্ত পূরণের জন্য TYPHIBEV ভ্যাকসিনের ২য়/৩য় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভারত বায়োটেকের Typbar-TCV অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ভ্যাকসিন দুটি আলাদা আলাদা গ্রুপে প্রয়োগ করে দেখানো হয় TYPHIBEV ভ্যাকসিন Typbar-TCV-এর মতোই নিরাপদ এবং এটি শক্তিশালী ইমিউন প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে সক্ষম (সূত্র: ৩)।
তাই TYPHIBEV ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার প্রমাণের জন্য ৩য় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রয়োজন হয়নি এবং ইমিউনোব্রিজিং পদ্ধতির মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটি ২০২০ সালে টাইফয়েড প্রতিরোধের জন্য ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও গাভি- দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সহযোগিতায় ‘বায়োলজিক্যাল ই’-র তৈরি TYPHIBEV ব্র্যান্ডের যে ভ্যাকসিনটি এখন দেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন’-এর মাধ্যমে প্রয়োগ করছে তা নিশ্চিতভাবেই নিরাপদ এবং ইমিউনোব্রিজিং পদ্ধতির মাধ্যমে এটির কার্যকারিতা নিশ্চিত হয়েই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটির অনুমোদন দিয়েছে।
তাই এ ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। বরং দেশে যেহেতু আগে থেকেই TYPHIBEV ইতোমধ্যে উচ্চমূল্যে (এক ডোজ ৩ হাজার ২১৯ টাকা) বাজারজাত করা হচ্ছে, এটি কালোবাজারে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সবাইকে এ বার্তাটি দেওয়া জরুরি যে, ভ্যাকসিনের কারণে পঞ্চাশ বছরে প্রায় ১৫ কোটি মানুষের জীবন বেঁচেছে কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কোনো মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়নি। এটি বুঝতে হবে যে, টাইফয়েড উন্নত দেশের কোনো সমস্যা নয়, সুতরাং আমাদের দেশে ট্রায়াল দিয়ে তাদের লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
টাইফয়েড ভ্যাকসিন নিয়ে যে অপপ্রচার চলছে তা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কাজ করতে হবে, কীভাবে ও কেন TYPHIBEV ভ্যাকসিনকে গণটিকা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হলো তা পরিষ্কার করতে হবে। সবাইকে বোঝাতে হবে দেশে TYPHIBEV-এর কোনো ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে না এবং এটির এক ডোজ টিকা Typbar-TCV-এর মতো টাইফয়েড প্রতিরোধে অন্ততপক্ষে ৫ বছর কাজ করবে।
তথ্যসূত্র:
১। https://medex.com.bd/generics/2077/typhoid-conjugate-vaccine/brand-names
২। Qadri, F., Khanam, F., Liu, X., Theiss-Nyland, K., Biswas, P. K., Bhuiyan, A. I., ... & Clemens, J. D. (2021). Protection by vaccination of children against typhoid fever with a Vi-tetanus toxoid conjugate vaccine in urban Bangladesh: a cluster-randomised trial. The Lancet, 398(10301), 675-684.
৩। Thuluva S, Paradkar V, Matur R, Turaga K, Gv SR. A multicenter, single-blind, randomized, phase-2/3 study to evaluate immunogenicity and safety of a single intramuscular dose of biological E's Vi-capsular polysaccharide-CRM197 conjugate typhoid vaccine (TyphiBEVTM) in healthy infants, children, and adults in comparison with a licensed comparator. Hum Vaccin Immunother. 2022 Nov 30;18(5):2043103.
ড. মো. আজিজুর রহমান : অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)