শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
শেরপুরে হাসপাতাল থেকে তিন দিন বয়সী এক নবজাতককে চুরির অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরের বটতলা এলাকায় অবস্থিত ইউনাইটেড (প্রা.) হাসপাতালে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে।
স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি এবং অসচেতন ব্যবস্থাপনার কারণেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার ফিরোজ মিয়ার স্ত্রী আবেদা বেগম গত বুধবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। শুক্রবার দুপুরে ছাড়পত্র পাওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই সকালে ক্লিনিকের কেবিন থেকে নবজাতকটি চুরি হয়ে যায়। কক্ষ থেকে নবজাতক নিখোঁজ হওয়ার পর বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে কোনো জরুরি ব্যবস্থা না নিয়ে বরং পরিবারের লোকজনকে হুমকি ও গালাগাল করেন দায়িত্বরত ব্যবস্থাপক দিদারুল ইসলাম।
পরে ক্ষুব্ধ স্বজনরা থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে। এতে দেখা যায়, একজন মধ্যবয়সী নারী নবজাতকটিকে একটি ব্যাগে করে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছেন। তবে ঘটনার সময় হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ফ্লোরে সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ থাকা এবং কিছু ফুটেজ না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
নবজাতকের বাবা ফিরোজ মিয়া বলেন, যেই কেবিনে আমরা ছিলাম, সেই ফ্লোরের ক্যামেরা কেন বন্ধ ছিল? অন্যান্য জায়গার ভিডিও পাওয়া গেলেও আমাদের ফ্লোরের ভিডিও নেই। এটা পরিষ্কার যে, হাসপাতালের সহায়তায় আমার মেয়েকে চুরি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটির মা আবেদা বেগম বলেন, শুধু কিছু সময়ের জন্য আমি বাইরে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি আমার বুকের ধন নেই। হাসপাতালে আসার উদ্দেশ ছিল নিরাপদ প্রসব, এখন আমার সন্তানের খোঁজ নেই। আমি বাঁচতে চাই না, যদি আমার মেয়েকে ফিরে না পাই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও রোগীর স্বজনরা বলেন, ইউনাইটেড প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা ধরনের অভিযোগ উঠেছে। ভুল চিকিৎসা, অপারেশনের সময় নবজাতকের অঙ্গহানি, রোগীর মৃত্যু ও নবজাতক চুরির মতো ঘটনার নজির রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে। কেউ প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষের লোকজন ভয়ভীতি দেখায় বলেও অভিযোগ ওঠে।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীদার মিয়া বলেন, নবজাতক চুরির বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও তারা জানেন না কীভাবে এটি ঘটল। সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ার বিষয়ে তিনি দাবি করেন, মেমোরিতে জায়গা না থাকায় পুরনো ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত শুরু করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছেন বলে জানিয়েছেন। নবজাতক উদ্ধারে পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছে এবং অপরাধীদের শনাক্তে সবধরনের প্রযুক্তি সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)