শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধি, বৈশ্বিক নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক বাজারের অস্থিরতার কারণে ২০২৪ সালের অপ্রত্যাশিতভাবে দুর্বল প্রবৃদ্ধির পর দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও মন্থর হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস, জুন ২০২৫ শীর্ষক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ভারতের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। যা মূলত চাহিদা অনুযায়ী বিনিয়োগে মন্দা এবং সরবরাহের দিক থেকে শিল্প উৎপাদনে গতিকে প্রতিফলিত করে। তবে নির্মাণ ও পরিষেবা খাতের প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল ছিল এবং গ্রামীণ এলাকার শক্তিশালী চাহিদার কারণে কৃষি উৎপাদন পূর্বের তীব্র খরা পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার হয়েছে। ভারত বাদে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের প্রবৃদ্ধি সাধারণত স্থিতিশীল হয়েছে। পাকিস্তানে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ২.৭ শতাংশে পৌঁছেছে (২০২৪/২৫ অর্থবছর), যা কৃষি উৎপাদন ও শিল্প খাতের সামান্য প্রসারের কারণে সম্ভব হয়েছে। ভুটান, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কার মতো কয়েকটি দেশে ২০২৫ সালের শুরুর দিকে পর্যটন খাত শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। শ্রীলঙ্কার শিল্প উৎপাদন ২০২৪ সালে পুনরুদ্ধার হয়েছে।
অন্যদিকে ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আন্তঃসীমান্ত বিক্রি ও রাজস্ব বাড়াতে সাহায্য করেছে। নেপালে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খাত উপকৃত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি ২০২৪/২৫ অর্থবছরে (জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫) ৩.৩ শতাংশে নেমে এসেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যা মূলত ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতিকূল প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। এছাড়া উচ্চ অনিশ্চয়তা এবং কাঁচামালের বর্ধিত মূল্য বেসরকারি বিনিয়োগে বাধা দিয়েছে। একই সঙ্গে মূলধনী পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় শিল্প উৎপাদনও হ্রাস পেয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৪.৯ শতাংশ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৫.৭ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উন্নতি, ব্যবসা পরিবেশ শক্তিশালীকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সংস্কারের সফল বাস্তবায়নের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। রেমিট্যান্সের স্থিতিশীল প্রবাহ এবং মুদ্রাস্ফীতি কমে আসার কারণে বেসরকারি ভোগ ব্যয় শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের দুর্বল প্রবৃদ্ধি এবং উচ্চ বাণিজ্য বাধার কারণে রপ্তানি কার্যক্রমে মন্দা দেখা যেতে পারে।
আঞ্চলিক মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে জানায়, এই অঞ্চলে গড়ে মুদ্রাস্ফীতি ধীরে ধীরে কমেছে। বেশিরভাগ অর্থনীতিতে প্রধান মুদ্রাস্ফীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বা তার নিচে রয়েছে। যা নীতি সুদের হার কমানোর সুযোগ করে দিয়েছে। ভারতে ২০২৫ সালের প্রথম দিকে নীতি হার কমানো হয়েছে। পাকিস্তানে প্রধান মুদ্রাস্ফীতি ২০২৫ সালের প্রথম দিকে ২ শতাংশের নিচে নেমে আসে, আর শ্রীলঙ্কায় সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাল থেকে মুদ্রাস্ফীতিহীনতা অনুভব করছে। তবে বাংলাদেশে গত বছর বেশ কয়েকবার সুদের হার বৃদ্ধি সত্ত্বেও প্রধান মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার উপরে রয়ে গেছে, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার মন্থর প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান চ্যালেঞ্জের বিষয়ে সংস্থাটি জানায়, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য বাধা রপ্তানিকে প্রভাবিত করবে, ব্যবসায়িক আস্থা কমবে এবং বিনিয়োগকে দুর্বল করবে। ফলস্বরূপ দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস পূর্বের অনুমানের তুলনায় ০.৪ শতাংশ কমানো হয়েছে। ২০২৬-২৭ সালে প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬.২ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)