বৃহঃস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়াতে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এই অর্থে হাতে নেওয়া হচ্ছে ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ নামের একটি নতুন প্রকল্প। এটির মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৮ কোটি ৮০ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক হাজার কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এই ঋণ পাওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এদিকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে তিন ধরনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে সরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি নিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০৩০ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের পাবলিক রিলেশন বিভাগের প্রধান মেহেরিন এ মাহবুব বুধবার জানান, ১২ জুন সরকারি খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতা বাড়াতে ২৫ কোটি ডলারের একটি ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক বোর্ড। সেই ঋণের মধ্যে রাজস্ব বোর্ড সংস্কারসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে ঋণ রয়েছে। তবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঋণচুক্তি কবে নাগাদ হতে পারে সেটি ইআরডি বলতে পারবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বাংলাদেশের রাজস্ব সংগ্রহ অত্যন্ত কম, যা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। দেশে রাজস্ব ও জিডিপির অনুপাত ২০১২ অর্থবছরে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। যেটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসে। এই সময়ের মধ্যে কর জিডিপির অনুপাত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে স্থবির হয়ে পড়ে। সর্বশেষ গত বছরে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসে। এটি বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন এবং দক্ষিণ এশিয়ার সমকক্ষ দেশগুলোর অনুপাতের তুলনায় উল্লেখযোগ্য কম। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের চিহ্নিত করা তিনটি চ্যালেঞ্জ হলো-প্রথমত, বাণিজ্য সম্পর্কিত করের ওপর অত্যাধিক নির্ভরতা। দ্বিতীয়ত, একটি মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ব্যবস্থা থাকলেও সেটি অসংখ্য ছাড় এবং সংক্ষিপ্ত হার দিয়ে চিহ্নিত। যেটি দারিদ্র্যবান্ধব না হলেও রাজস্ব আদায় বাড়াতে কাজে আসছে না।
তৃতীয়ত, আয়করের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ছাড়, কর্তন এবং অবকাশ সুবিধা দেওয়া। এসব চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হলেও রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং সুনির্দিষ্ট নীতি সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় রাজস্ব আদায় কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পে যেসব সংস্কার নিশ্চিত করা হবে সেগুলো হলো-জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট বিজনেস প্রসেস প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, পরিবর্তন এবং ব্যবস্থাপনা পরিকল্পা গ্রহণ।
এছাড়া প্রশিক্ষণ, বিশ্লেষণী ও নীতি বিশ্লেষণ সক্ষমতা জোরদারকরণ, অভ্যন্তরীণ ও বহিঃযোগাযোগ ব্যবস্থাপনা এবং একটি শক্তিশালী গবেষণা ও পরিসংখ্যান ইউনিট প্রতিষ্ঠা। পাশাপাশি সংস্থাটির সেবা প্রদান ব্যবস্থা আধুনিকায়নের জন্য তৈরি মাস্টার প্ল্যান বিশ্লেষণ, পরিবর্তন এবং সে অনুসারে স্বয়ংক্রিয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। আরও আছে, আয়কর প্রশাসনকে শক্তিশালী করতে সহজ প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়করণ, বিদ্যমান ও নতুন সিস্টেমগুলোর মধ্যে কার্যকর আন্তঃসংযোগ স্থাপন এবং নতুন সিস্টেম প্রবর্তন।
ভ্যাট প্রশাসনকে আধুনিকায়ন করতে এসএপি কম্পিটেনসি সেন্টার প্রতিষ্ঠা, ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম ও সংশ্লিষ্ট আইটি কাঠামোর পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন এবং আইভিএএসের সঙ্গে ইআরপি সফটওয়্যারের কার্যকর একীভূতকরণ করা। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে একটি ই-আনভয়েসিং সিস্টেম উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। কাস্টমস ও ডিইডিওর (শুল্ক ফেরত সেন্টার) আধুনিকায়নের জন্য ছয়টি ডিজিটাল ব্যবস্থা ও সিস্টেম উন্নয়ন করা হবে।
এনবিআর সংস্কারের কার্যক্রম হিসাবে আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর উভয় ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার তৈরি করা হবে। এছাড়া এনবিআরের বিদ্যমান ও প্রস্তাবিত সিস্টেম যেমন এ্যাসাইকোডা ওয়ার্ল্ড, আইভিএএস এবং আয়কর সংক্রান্ত অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আইবিএএস প্লাস প্লাস ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ডেটা প্ল্যাটফর্মের সমন্বয় করা হবে। করদাতাদের জন্য একটি স্বয়ংক্রিয় কল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা। রাজস্ব বোর্ডের জনবল, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের জন্য একটি আধুনিক ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি। কর প্রশাসনের জনবলের দক্ষতা বাড়াতে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা। একটি পূর্ণাঙ্গ আয়কর প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠার জন্য সমীক্ষা ও নকশা তৈরি করা হবে। বিভিন্ন ভ্যাট অফিসের অবকাঠামো উন্নয়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাইয়ুম আরা বেগম বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতায় এনবিআরের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)