মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২


এক বছরে বেড়েছে ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণ

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক

প্রকাশিত:২৯ জুলাই ২০২৫, ১১:৪০

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক ০৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় চার ভাগের এক ভাগ ঋণই এখন আদায়যোগ্য নয় বলে বিবেচিত।

তিন মাস আগেই, মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সেই তুলনায় মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আর বছরের ব্যবধানে, ২০২৪ সালের জুনে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। সে তুলনায় এক বছরে বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিতরণ করা বড় অঙ্কের ঋণ এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নামে-বেনামে নেওয়া ঋণের বড় অংশ এখন ফেরত আসছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অনেক ঋণ আদায় না হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী খেলাপি হিসাবে শ্রেণিকরণ করায় ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। অনিয়মের কারণে অনেক ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেই খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে ঋণ নবায়নের মাধ্যমে কাগজে-কলমে খেলাপি কম দেখানো হলেও বাস্তবে এসব ঋণ আদায়যোগ্য নয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই তা বেড়েছে। অর্থনীতিবিদদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ—সরকারঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীরা নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ তুলে নিয়েছেন, যার একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। নতুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেতৃত্ব আগের দেওয়া একের পর এক ‘নীতি সুবিধা’ বাতিল করে খেলাপি নির্ধারণে কঠোর হচ্ছে। ফলে ভালো-মন্দ সব ধরনের ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংক—ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গড় খেলাপি ঋণ ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় সেগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্রও সামনে আসছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংক, আইএফআইসি, ইউসিবি, এনআরবি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং সরকারি খাতের অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে।

এদিকে ১,২০০ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ নবায়নের আবেদন করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ইতিমধ্যে শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যাংকগুলো আবারও নীতিগত ছাড় দেওয়ার কথা ভাবছে।

সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও ঋণ আদায়ে দুর্বল নজরদারি অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতে খেলাপি ঋণের চিত্র আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

ডিএস /সীমা

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:০৫ ভোর
যোহর ১২:০৫ দুপুর
আছর ০৪:৪৩ বিকেল
মাগরিব ০৬.৪৭ সন্ধ্যা
এশা ০৮:৭ রাত

মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫