বৃহঃস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশজুড়ে নথিবিহীন অভিবাসীদের শনাক্ত, আটক এবং নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর যে প্রকল্প নিয়েছেন, সেখানে প্রথম বড় ধরনের বাধা এসেছে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে। গত ৫ দিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ জেলাটি।
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা লস অ্যাঞ্জেলেস। দেশটির বেশ কয়েকজন ধনকুবের এবং খুবই ক্ষমতাধর ব্যক্তি বসবাস করেন এই জেলার বিভিন্ন শহরে-গ্রামে। লস অ্যাঞ্জেলেস জেলার আয়তন ১২ হাজার ৩১০ কিলোমিটার। জেলার প্রধান শহর লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি, চাকচিক্যপূর্ণ বিলাসবহুল শহর বেভারলি হিলস, হলিউড, লং বিচ, ম্যালিবু, পাসাডেনা, স্যান্তা মনিকাসহ বিভিন্ন শহরে ও গ্রামে বসবাস করেন প্রায় ১ কোটি মানুষ, যা পুরো ক্যালিফোর্নিয়ার মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ।
এই জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অভিবাসী এবং তাদের মধ্যে অনেকেরই বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় নথি নেই। যুক্তরাষ্ট্রের জনশুমারি দপ্তরের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খোদ লস অ্যাঞ্জেলেস সিটিতেই বসবাস করেন প্রায় ৯ লাখ নথিবিহীন অভিবাসী। এদের মধ্যে অনেকেই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।
২০২০ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস সিটির বাসিন্দাদের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যালিফোর্নিয়া। সেই জরিপ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের বৈধ-অবৈধ অভিবাসীদের ৫৬ শতাংশই মেক্সিকো ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা। বাকিদের অধিকাংশই এশিয়ান। এছাড়া প্রশান্ত মহাগারের দ্বীপগুলো থেকে আসা লোকজনও আছেন সেখানে।
শহরটিতে বৈধ-অবৈধ অভিবাসনের ব্যাপারটি বেশ গোলমেলে। কারণ লস অ্যাঞ্জেলেসে এমন বহু অভিবাসী পরিবার রয়েছে, যেখানে এক বাড়িতে বসবাসকারী লোকজনের কারো বৈধ নথি রয়েছে, আবার কারোর নেই।
গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের পর বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসবের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী নথিবিহীন অভিবাসীদের আটক করে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত একটি আদেশও ছিল।
ট্রাম্প এই আদেশে স্বাক্ষর করার পর দেশজুড়ে অভিযানে নামে পুলিশ ও মার্কিন কাস্টমস বিভাগের আইন প্রয়োগকারী শাখা আইসিই। গত কয়েক মাসে নিউইয়র্ক, টেক্সাসসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে গ্রেপ্তার করা হয় হাজার হাজার নথিবিহীন অভিবাসীকে, তাদের মধ্যে অনেককে ফেরতও পাঠানো হয়েছে।
গত ৬ জুন শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলী এলাকা প্যারামাউন্টে নথিবিহীন অভিবাসীদের শনাক্ত ও আটক করতে অভিযানে নামেন পুলিশ ও আইসিই সদস্যরা। তবে অভিযানের শুরুতেই তারা ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। প্যারামাউন্টের বাসিন্দারা তীব্র বিক্ষোভের পাশাপাশি পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল, বোতল ও মলোটভ ককটেল বা পেট্রোল বোমা ছুড়তে থাকেন।
অবস্থা বেগতিক দেখে পরের দিন পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের সহায়তার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন আধা সামরিক বাহিনী হাজার ন্যাশনাল গার্ডের ২ হাজার সদস্যকে মোতায়েনের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার পরিবর্তে সংঘাত আরও বাড়তে থাকে।
এই অবস্থায় গতকাল সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেসে আরও ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড এবং তাদের সঙ্গে ৭০০ মেরিন সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাম্প।
আজ ৫ দিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে আছে লস অ্যাঞ্জেলেস। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া এবং সান ফ্রান্সিসকোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্র : এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)