বুধবার, ৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথমবারের মতো দেওয়া প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে নিজের প্রত্যাশা খুব কম- এমন মন্তব্য করে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আগের সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে খুব একটা বের হতে পারেনি। বাজেটের সাইজ ছোট হওয়া উচিত ছিল। গুণগত দিক দিয়ে এবারের বাজেটে পরিবর্তন নেই, সংখ্যার সামান্য পরিবর্তন রয়েছে। তাই সরকারের জন্য এই বাজেট বাস্তবায়ন করা খুব একটা সহজ হবে না।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এবার জাতীয় সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে সম্প্রচার করা হয়।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
আমীর খসরু অন্যান্য বারের মতো এবারও বাজেট পেশের দিনে ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানান। তবে দলের পক্ষ থেকে বুধবার (৪ জুন) আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানান সাবেক এই মন্ত্রী।
আমীর খসরু বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে বাজেটের প্রত্যাশা খুব সীমিত। কারণ তাদের একটা সীমাবদ্ধতা, সময়ের ব্যাপার আছে। একটি নির্বাচিত সরকারের বাজেটের প্রতি এপ্রোচ, দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার একটা বিষয় আছে সেটা বুঝতে হবে। এই জন্য মনে করি যে, ওভারওল যেটা ফিল করি সেটা হলো- বাজেটের সাইজটা বাড়াতে বাড়াতে আগের সরকার যে জায়গায় নিয়ে গেছে সেটার সঙ্গে বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। রাজস্ব আয়ের পুরোটায় পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে যখন ব্যয় হয়, তখন কিন্তু আপনি উন্নয়ন বাজেট দেশের ভেতর থেকে দেশের বাইরে থেকে চালাচ্ছেন। তার ফলে যে সমস্যা হয় তা হলো- সরকার যখন দেশের ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেয় তখন ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে। সেটা দেশের মানুষকে সেটা দিতে হয় বছরের পর বছর। সেই ঋণের সুদের কারণে উন্নয়ন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আবার দেশের ভেতর থেকে ঋণ নেওয়া হলো বেশি ক্ষতি। এটার সুদ দিতে গিয়ে পুরো বাজেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সরকারকে অনেক বেশি টাকা ঋণ নেওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণের রেট বেড়ে যায়। দেশের ভেতর থেকে যখন সরকার বেশি ঋণ নেয় তখন ব্যক্তি ঋণ কমে যায়। এর ফলে বিনিয়োগ হয় না। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না। মানুষের আয় বৃদ্ধি পায় না। যেহেতু প্রাইভেট সেক্টর বিনিয়োগ পায় না। তারা বিদ্যমান বিনিয়োগ আরও বাড়াতে পারে না।
খসরু বলেন, বাজেটে সেই বিষয়টি লক্ষ্য করে রাজস্ব আয়ের সঙ্গে বাজেটের আকারের সম্পৃক্ততা থাকা উচিত ছিল। আমি মনে করি সেটা হয়নি। রাজস্ব আয় যেটা আছে সেটার পুরোটাই পরিচালন ব্যয়ে চলে যাবে। পুরোটায় কিন্তু দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে ঋণ নিতে গেলে এর প্রভাবে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। এটাই মূল বিষয়।
পূর্বের সরকারের দেওয়া বাজেটের দিতে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আগে যেভাবে বাজেট চলে আসছি সংখ্যার সামান্য কিছু তারতম্য হয়েছে। কিন্তু বাজেটের মূল যে প্রিন্সিপাল ওইখানে কিন্তু আমরা আগের মতোই রয়েই গেছি।
প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক বলছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই শব্দটা বলতে চাই না। তবে অনেকটা আগের সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে খুব একটা বের হতে পারিনি। রাজস্ব আয়কে বৃদ্ধি করে বাজেট করা উচিত। এতে বেসরকারি খাতের মানি ফ্লোটা থাকল, বিনিয়োগ থাকল, সুদের হারটা কমে এলো, বিদেশ থেকে ঋণ কমে এলো। সে জায়গা থেকে খুব একটা সরে আসতে পারিনি। আমি মনে করি মৌলিক জায়গায় গলদ রয়ে গেছে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)