বৃহঃস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপিকে কোনও ধরনের বিরোধে না জড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ৭ জুন ঈদুল আজহার দিন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে তাদেরকে এই পরামর্শ দেন। একইসঙ্গে নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যেখানে সমস্যা রয়েছে তা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করতেও পরামর্শ দেন খালেদা জিয়া।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা বলা হয়েছে যে সমঝোতার ব্যবস্থা করেন। কারণ তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ কি? তারা কি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী নাকি?
বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুজন্য সদস্য বলছেন, খালেদা জিয়ার পরামর্শ হচ্ছে- নির্বাচন তারিখ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির বিরোধে যাওয়া ঠিক হবে না। কোনও সমস্যা থাকলে সেটা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করে নিতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে তো আমাদের কোনও বিরোধ ছিল না। শুরু থেকে আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করে আসছি। কিন্তু বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানালে এবং অন্যান্য কয়েকটি ইস্যুতে বিএনপির ওপর কিছুটা নাখোশ হন প্রধান উপদেষ্টা। এরমধ্যে আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ড. ইউনূসের পদত্যাগের ইস্যুতে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন- তিনি পদত্যাগ করলে জনগণ বিকল্প বেছে নেবে। তার এই বক্তব্যের পর প্রধান উপদেষ্টা বিএনপির ওপর আরও বেশি অসন্তুষ্ট হন।
এই নেতা আরও বলেন, সবকিছু মিলিয়ে যখন সরকারের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে সেটা ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বুঝতে পেরেছেন। যার কারণে তিনি সরকারের সঙ্গে বিএনপিকে বিরোধে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, আগামী ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার ড. ইউনূসের সঙ্গ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে আলোচ্য বিষয়ে আগামী নির্বাচনের তারিখের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। এছাড়া সংস্কার নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের সঙ্গে বিএনপির যেসব বিষয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে তা নিয়ে কথা হবে। তবে, এখানে সাম্প্রতিকালে চট্রগ্রাম বন্দর, মিয়ানমার সীমান্তে করিডোর দেওয়ার নিয়ে যে আলোচনা হয়েছিল বৈঠকে সময় থাকলে যেসব আলোচনা আসতে পারে।
দলটির নেতারা আরও বলছেন, সরকারের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য এখন মাত্র একটি জায়গায়। সরকার প্রধান ড. ইউনূস বলেছেন, আগামী বছরের এপ্রিল মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। আর বিএনপি দাবি জানাচ্ছি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের। এখন সেটা দুই পক্ষকে ছাড় দিয়ে এক-দুই মাস এদিক-সেদিক করতে হবে। যা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি বিগত কয়েকটি বৈঠকে বলে আসছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এতদিন সরকারের সঙ্গে যে এজেন্ডাগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি, সেগুলো তো দলের স্থায়ী কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে করেছি। সেখানে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সভাপতিত্ব করেছেন। আমরা মনে করি, বৈঠকে (ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক) সেই বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।
এ বিষয়ে গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ইম্পরটেন্ট ইভেন্ট’।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, জাতীয়ভাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবেও এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এই মিটিংটা হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে এবং অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন সৃষ্টি হতে পারে। এখন এটা নির্ভর করবে আমাদের নেতৃবৃন্দের (মুহাম্মদ ইউনুস-তারেক রহমান) ওপর, তারা কীভাবে সেই সম্ভাবনার দিকে নিয়ে যাবেন। আমরা আমাদের দলের তরফ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ অথরিটি দিয়েছি, তার সাফল্য প্রার্থনা করেছি।’
কেন এপ্রিল মাস আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য উপযোগী নয় বলে মনে করছে বিএনপি, তারও ব্যাখা দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার যদি এপ্রিল মাসে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে তাহলে বিএনপির করণীয় কী হবে তা নিয়ে এখনও পার্টির ফোরামে আলোচনা হয়নি। আমরা আশা করছি সরকার বাস্তবতা বিবেচনা করবে। আসলে এই সময়টা (এপ্রিল) নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত না।
তিনি আরও বলেছেন, এপ্রিলে নির্বাচন হলে সময়টা হবে ঈদের কয়েক দিন পর। তাহলে ভাবুন, পুরো রমজান মাস প্রার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীদের কী অবস্থা হবে? আমি নিজেই এখন চিন্তিত যে প্রত্যেক দিন ইফতার পার্টি করতে হবে। এটা কোনও মজার বিষয় না। এতে নির্বাচনি খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অথচ আমরা সবাই বলি নির্বাচনি খরচ কমাতে হবে। কিন্তু এতে আরও বাড়বে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দ্বিতীয়ত তখন প্রচণ্ড গরম থাকবে। ঝড়-বৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের নির্বাচনি সংস্কৃতি হচ্ছে জনসভা করা। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি ও রোদের মধ্যে জনসভায় লোকজনের উপস্থিতি কষ্ট হবে। রোদের মধ্যে কে আসবে? রাতে গিয়ে মিটিং করতে হবে।
বাংলাদেশে সব সময় ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসের মধ্যে নির্বাচন হয়েছে বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার বাইরে দুই বার নির্বাচন হয়েছে, কিন্তু সেগুলো ঝামেলা পূর্ণ হয়েছিল।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)