বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
সপ্তমবারের মতো ভাঙনের মুখে প্রয়াত স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলের গঠনতন্ত্রের ‘বিতর্কিত’ ২০(ক) ধারাকে কেন্দ্র করে ফের ভাঙতে যাচ্ছে জাপা। একইসঙ্গে দলের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদেরকে শীর্ষপদ থেকে সরাতে জোট বেঁধেছে বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের একাংশ। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন দল থেকে ২০(ক) ধারার ক্ষমতাবলে ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বহিষ্কার হওয়া নেতারা। তবে জিএম কাদেরপন্থি নেতাদের অভিযোগ, আবারও ভাঙনের পেছনে অতীতের মতো সরকার পক্ষের ইন্ধন রয়েছে।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, দলের গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা অনুযায়ী জাপা চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো ছাড়াই দলের যে কাউকে পদ থেকে সরাতে পারেন, বহিষ্কার করতে পারেন। যে কাউকে যেকোনো পদ দিতে পারেন। এজন্য তাকে জবাবদিহিতা করতে হয় না। যে কারণে দলের বর্তমান কমিটির সিনিয়র নেতাদের বড় একটি অংশ বর্তমান চেয়ারম্যানকে এই ধারা সংশোধন করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তা পরিবর্তন করতে আগ্রহী নন। তাই এই অংশটি যেকোনো সময় পদ হারানোর ভয়ে এখন জিএম কাদেরকে একঘরে করে ২৮ জুন সম্মেলন করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জাতীয় পার্টি থেকে বিভিন্ন সময় পদ হারানো নেতারা।
গত ২০ মে জাপার প্রেসিডিয়াম সভায় সিদ্ধান্ত হয় ২৮ জুন দলের সম্মেলন হবে। এজন্য জাপা চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া করে। কিন্তু গত ১৬ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জিএম কাদের বলেন, চীন মৈত্রী কর্তৃপক্ষ হল বরাদ্দ বাতিল করায় ২৮ তারিখের সম্মেলন হচ্ছে না। হল পাওয়া গেলে সম্মেলনের পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
তার এই বিবৃতির পর পাল্টা বিবৃতি দিয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক ও অনভিপ্রেত। সম্মেলনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রেসিডিয়াম সভায় সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল কোনো কারণবশত সম্মেলনের জন্য মাঠ বা হল পাওয়া না গেলে রাজধানীর কাকরাইলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সম্মেলন হবে। এ সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। এ সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে দলের চেয়ারম্যান ২৮ জুন দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সম্মেলনের আয়োজন নিশ্চিত করবেন বলে আশা করি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী ২৮ জুন কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলের কাউন্সিল হবে।
দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের তো ২৮ তারিখের সম্মেলন স্থগিত করেছেন– এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনি একক সিদ্ধান্তে এটা স্থগিত করতে পারেন না। কারণ প্রেসিডিয়ামের সভায় এই তারিখ ঠিক হয়েছিল। উনাকে স্থগিত করতে হলে প্রেসিডিয়ামের মিটিংয়ে করতে হবে। সুতরাং ওইদিন দলের কাউন্সিল হবে।
তাহলে কী জাতীয় পার্টি আবার ভাঙতে যাচ্ছে– এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমরা তো আগের মতো দল ভেঙে বেরিয়ে এসে কাউন্সিল করছি না। চেয়ারম্যানের ঘোষণা দেওয়া তারিখে দলের কাউন্সিল হচ্ছে। সেই কাউন্সিলে দলের কাউন্সিলর-ডেলিগেটরা ভোট দিয়ে পরবর্তী চেয়ারম্যান ঠিক করবেন। কাউন্সিলে উপস্থিত নেতাদের মধ্য থেকে দলের পরবর্তী চেয়ারম্যান-মহাসচিবের জন্য প্রার্থী হবেন।
জিএম কাদেরকে বাদ দিয়েই কি জাতীয় পার্টি হচ্ছে– জানতে চাইলে এ নেতা বলেন, তিনি সম্মেলনে না এলে তো দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে বাদ পড়বেন। কারণ উপস্থিত না থাকলে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে দল থেকে বাদ পড়ছেন না।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আসলে জিএম কাদেরকে বলেছিলাম ২০(ক) ধারা পরিবর্তন করার জন্য। কিন্তু উনি এটা করবেন না। সেজন্য আমরা বলেছি তাহলে এটা নিয়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। সেখানে আমরা চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে আমাদের প্রার্থিতা দেব।
কারা চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে প্রার্থী হবেন সেটা কাউন্সিলের আগে ঠিক করা হবে বলেও জানান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। যেহেতু আমি দলে আছি নিশ্চয়ই একটা পদে প্রার্থী হব– উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারের ইন্ধনের সন্দেহ কেন জিএম কাদেরপন্থিদের
এবার জাতীয় পার্টি ভাঙনের পেছনে সরকারের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছেন জিএম কাদেরের অনুসারীরা। তারা বলেন, জাতীয় পার্টির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। তিন বছর পরপর সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। নির্বাচন কমিশন আমাদেরকে নতুন করে কাউন্সিল করে কমিটি হালনাগাদ করার জন্য তাগিদ দিচ্ছে। অথচ বিগত ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে বিএনপির কাউন্সিল হয় না, তাদেরকে তো কোনো চাপ দিচ্ছে না ইসি। এ কারণেই সরকারের প্রতি আমাদের সন্দেহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিএম কাদেরপন্থি জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য বলেন, পার্টির কাউন্সিল করার তো একটা বাধ্যবাধকতা আছে। আমরাও দ্রুত কাউন্সিল করতে চাইছি। কিন্তু হল রুম পাচ্ছি না। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আমাদের মিটিংয়ে হামলা হওয়ার কারণে কেউ জায়গা দিতেও চাইছে না। অথচ নির্বাচন কমিশন মৌখিকভাবে আমাদেরকে কাউন্সিল করার জন্য চাপ দিয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি ১৭ বছর কোনো কাউন্সিল করেনি কিন্তু তাদেরকে কিছু বলছে না। এ কারণে সরকারের ওপর আমাদের সন্দেহ।
এই নেতা আরও বলেন, অতীতেও দেখা গেছে জাতীয় পার্টি যতবারই ভেঙেছে, তৎকালীন সরকারের ইশারাতে হয়েছে। তবে, এটাও মনে রাখতে হবে যতবার পার্টি ভেঙেছে সেটা এক কিংবা দুইজন এমপির দল হয়েছে। বড় কোনো পার্টি হতে পারেনি।
সরকারের ইন্ধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এটা কোনোক্রমেই সত্য নয়। উনাকে (জিএম কাদের) বলেছি, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। ২০(ক) ধারাটা পরিবর্তন করুন। আপনি তো মানুষকে ভয় দেখিয়ে কিছু করতে পারবেন না। ২০(ক) হচ্ছে এমন– তিনি আমাকেও বহিষ্কার করতে পারবেন। যদিও এখন সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার কারণে পারবেন না। আমি ৪৫ বছর এই পার্টি করছি। একটা দলে তো এরকম অগণতান্ত্রিক ধারা থাকতে পারে না।
জাতীয় পার্টির এই ২০(ক) ধারা দীর্ঘসময় ধরে আছে, তাহলে এতদিন কেন এটা পরিবর্তন করতে বলেননি– জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘসময় ধরে আছে বলে কি এখনো থাকতে হবে। আজ দেশের সংবিধান পরিবর্তন হচ্ছে। তাহলে আগে ছিল দেখে এখন রাখতে হবে, এটা কি যুক্তি হতে পারে?
অন্যদিকে কাউন্সিল স্থগিত করতে হলে দলের চেয়ারম্যানকে প্রেসিডিয়ামের মিটিং ডেকে অনুমতি নিতে হবে এমনটি জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের কোথাও নেই উল্লেখ করে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এখানে যেটা ব্যাখ্যা আসতে পারে যে, নতুন করে আবার কোনো তারিখ ঘোষণা করতে হলে আবার প্রেসিডিয়ামের মিটিং ডাকতে হবে। এটা হতে পারে। আবার এখানে বাস্তবতা হচ্ছে কোনো হলরুম পাওয়া যাচ্ছিল না। রাস্তায় তো একটা দলের কাউন্সিল হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, উনাদের যে ২০(ক) ধারা নিয়ে আপত্তি সেটার তো সমাধান আছে। আমাদের গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি এখানে কোনো সংশোধন আনার প্রয়োজন মনে করলে বিষয়টি তুলে ধরবে। তারপর পার্টিতে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান করা যাবে। তবে আমি মনে করি এরকম মুখোমুখি কাউন্সিল করে কোনো সমাধান হবে না।
হঠাৎ বিদ্রোহে স্তম্ভিত জিএম কাদেরপন্থিরা
দলের সিনিয়র নেতাদের হঠাৎ করে বিদ্রোহের কারণে হতবাক হয়ে পড়েছেন জিএম কাদেরপন্থি জাতীয় পার্টির নেতারা। তারা বলছেন, এবারের বিদ্রোহী গ্রুপে জাতীয় পার্টির বড় বড় নেতারা যুক্ত আছেন। দলের বর্তমান মহাসচিবও এই বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাছাড়া আগে জাতীয় পার্টি যতবার বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়ে ভাঙনের মুখে পড়েছে, ততবারই দীর্ঘদিন আগে থেকে তার লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এবার যেটা হয়েছে সেটা ঝড়ের গতিতে হয়েছে। তাই শুধু আমরা নয়, দলের চেয়ারম্যান নিজেও কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়েছেন।
জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠ জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে দলের গঠনতন্ত্র ২০(ক) ধারা অনুযায়ী দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর আজকের বর্তমান মহাসচিব চুন্নু কিন্তু ২০(ক) ধারা দিয়েই মহাসচিব হয়েছিলেন। অথচ এখন তিনি এ ধারা নিয়ে কথা বলছেন। এখানে চুন্নু কোনো পক্ষ না নিলে ভালো হতো।
জিএম কাদের অনুসারী জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এবারের বিদ্রোহী অংশে জাতীয় পার্টির অনেক বড় বড় নেতা আছেন। এটা হঠাৎ করে হওয়ায় আমরা স্তম্ভিত হয়ে গেছি। বিদ্রোহী কাউন্সিল হবে, এ ধরনের ভাবনা আমাদের মধ্যে ছিল না। সেটাতে আসলে আমরা কিছুটা নার্ভাস। চেয়ারম্যান নিজেও এবারের বিদ্রোহের বিষয়টি আগে থেকে অনুমান করতে পারেননি।
জিএম কাদেরের ঘনিষ্ঠ এক আরেক নেতার দাবি, বর্তমান মহাসচিব চুন্নু আগে থেকেই আনিসুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ। তাছাড়া এখন বাতাসে একটা কথা ভাসছে যে, ওই গ্রুপকে (আনিসুল ইসলামদের) সরকার সাপোর্ট দিচ্ছে। তাই এখন তিনি (চুন্নু) মনে করছেন যে, ওখানে থাকাই ভালো। ওখানে থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে না, বিদেশ যাওয়া যাবে।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দলের প্রেসিডিয়াম মিটিং করে ২৮ জুন দলের সম্মেলন তারিখ ঘোষণা করেছি। কিন্তু চেয়ারম্যান জিএম কাদের একটা অজুহাত তুলে তা স্থগিত করেছেন। কিন্তু তিনি এককভাবে সম্মেলন স্থগিত করতে পারেন না দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ছাড়া। আনিসুল ইসলাম ও রুহুল আমিন হাওলাদার আহ্বান জানিয়েছেন যে, আপনি (জিএম কাদের) এককভাবে এটা স্থগিত করতে পারেন না। ২৮ তারিখে যেন সম্মেলন করা হয়, সে ব্যাপারে তারা অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রেসিডিয়ামের মিটিংয়ে আমিসহ অনেকে দলের গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা সংশোধন করার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু কাদের সাহেব গণতন্ত্রের কথা বললেও গঠনতন্ত্রের ২০(ক) স্বৈরতন্ত্র। সেটা গণতন্ত্র বা আধুনিকায়ন করার প্রস্তাব দিলেও তিনি মানছেন না। তিনি এটাও বলেছেন যে, সব (নেতা) চলে গেলেও কিছু আসে যায় না।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ৩-৪ দিন আগে আমার সঙ্গে চেয়ারম্যানের কথা হয়েছে। আমি উনাকে বলে এসেছি, সবাইকে নিয়ে আমরা থাকি। আর ২০(ক) ধারা– এই সামান্য জিনিসটা পরিবর্তন করেন। দলের নেতৃত্ব দিলে তো অনেক সময় অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হয়।
২৮ তারিখের সম্মেলনে যোগদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। তবে কাদের সাহেব ২০(ক) ধারা যদি পরিবর্তন না করেন তাহলে আমি সিদ্ধান্ত নেব কি করব।
জিএম কাদের-বিরোধী রওশন এরশাদসহ দলটির সাবেক নেতাদের এবং খণ্ডিত জাতীয় পার্টির কয়েকটি অংশকে আগামী ২৮ জুনের সম্মেলনে এক ছাতার নিয়ে আসার চেষ্টা করছে বিদ্রোহী গ্রুপটি। তারা বলছেন, বিভিন্ন সময় জাতীয় পার্টি ভেঙে যেসব নেতারা বেরিয়ে গেছেন, এখন জাতীয় পার্টির নামে যেসব দল আছে সবগুলোকে একসঙ্গে এনে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত রওশন এরশাদের নেতৃত্ব থাকা জাতীয় পার্টি, সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, শেখ শহীদুল ইসলামের জাতীয় পার্টি এবং সাবেক মন্ত্রী এম এ মতিনের বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আগামী সম্মেলনে থাকতে রাজি হয়েছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি যতটুকু জানি আনিসুল ভাই (আনিসুল ইসলাম) ও হাওলাদার সাহেব (রুহুল আমিন হাওলাদার) এই সম্মেলনে যারা আগে জাতীয় পার্টি ছেড়ে চলে গেছেন সবাইকে নিয়ে আসছেন। বেগম রওশন এরশাদও পার্টির একটা অংশের চেয়ারম্যান আছেন। তার সঙ্গে আছেন সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা, কাজী ফিরোজ রশীদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ অন্যরা। এর বাইরে বিভিন্ন সময় যারা জাতীয় পার্টি ছেড়ে গিয়ে নিজেরা দল গঠন করেছেন সেই রকম আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শেখ শহীদুল ইসলামসহ যারা আছেন, সবাই এই কাউন্সিলে আসছে। তাদেরকে নিয়ে একটা ঐক্য করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু কাদের সাহেব (জিএম কাদের) এই ঐক্যটা চান না।
রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান সৈয়দ আবুল বাবলা বলেন, আনিস ভাই আমাদেরকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তখন বলেছি, আমরা বৃহত্তর ঐক্য চাই, আপনাদের কাউন্সিলে যাব। আমরা যদি মনে করি, এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হচ্ছে, তাহলে আমরা বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যে থাকব।
তাহলে কী রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বিলুপ্ত হচ্ছে– জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে পার্টিকে ভাগ করার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমরা বৃহত্তর ঐক্যের মধ্য থাকব। আমাদের এখানে আগের আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শেখ শহিদুল ইসলাম এবং আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মতিনের ছেলেসহ অনেকে আসবেন। সবাই মার্চ করে একসঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য হচ্ছে।
রওশন এরশাদ সম্মেলনে আসবেন কি না জানতে চাইলে আবুল হোসেন বাবলা বলেন, উনার শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে আসবেন। না হয় বার্তা দিতে পারেন। না হলে উনার দোয়া থাকবে।
২৮ জুনের সম্মেলনে অংশ না নিতে জেলা-উপজেলায় চিঠি জিএম কাদেরের
দলের কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমদুসহ অন্যদের নেতৃত্বে হওয়া ২৮ জুনের সম্মেলনে তৃণমূলের জাতীয় পার্টির নেতাদের অংশ না নিতে জেলা-উপজেলা কমিটিকে চিঠি দিয়েছেন জিএম কাদের। সেখানে বলা হয়েছে, ২৮ তারিখের সম্মেলনে দলের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নেই। এ সম্মেলনে কেউ অংশ নেবেন না। বিশেষ করে জাতীয় পার্টির প্রধান ঘাঁটি বৃহত্তর রংপুর বিভাগের নেতাদের অংশ নেওয়া ঠেকাতে মরিয়া জিএম কাদেরপন্থি জাতীয় পার্টি।
জাপা নেতা শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, একটি জেনারেল চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, পার্টির চেয়ারম্যানের সম্মতিতে ২৮ জুন কোনো কাউন্সিল হচ্ছে না। যাতে কেউ অংশ গ্রহণ না করে। কারণ এ কাউন্সিল তো মূলধারার জাতীয় পার্টিতে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ২৮ তারিখের কাউন্সিলটি হলে একটা বিতর্কের অবস্থা সৃষ্টি হবে। তখন পার্টির প্রেসিডিয়াম সভা বসে করণীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ফলে আমার মতে ২৮ তারিখের কাউন্সিল না হওয়া সবদিক থেকে মঙ্গলজনক। আর জাতীয় পার্টির শক্তি ও সামর্থ্য যদি এক রাখা যায় তাহলে সামনে দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একটি পার্টির চেয়ারম্যান তো একজনই হবেন। দুইজন তো চেয়ারম্যান হতে পারেন না।
সবচেয়ে বেশি ভাঙন জাতীয় পার্টিতে
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একই নামে সবচেয়ে বেশি ব্র্যাকেটবন্দি হয়েছে সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত দল জাতীয় পার্টি। বর্তমানে ‘জাতীয় পার্টি’ নামে সাতটি দলের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন এরশাদের ভাই ও স্ত্রীরা।
এরশাদের জীবদ্দশায় ‘জাতীয় পার্টি’ নামে পাঁচটি দল ছিল। মৃত্যুর পর (১৪ জুলাই, ২০১৯) তার সাবেক স্ত্রী বিদিশার ইচ্ছায় ‘নতুন জাপা’ নামের আরেকটি দল হয়। সবশেষ ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি অংশ ভাগ হয়ে যায়।
বর্তমানে ব্র্যাকেটবন্দি জাপার অংশগুলো হলো– জাতীয় পার্টি (জাপা), চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের; নতুন জাপা, এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক; জাতীয় পার্টি (জেপি), সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু; বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ; জাতীয় পার্টি, চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ; বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, সভাপতি ডা. এম এ মুকিত এবং জাতীয় পার্টি, চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)