রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
সাধারণত বিয়েতে বর বা কনের পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তিকে ‘উকিল বাবা’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, যাকে ওই বিয়ের অভিভাবক ধরা হয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, দোয়া, উপহার, এমনকি সামাজিক মর্যাদায়ও তাকে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো ইসলামের দৃষ্টিতে এই ধারণাটি কতটা ঠিক?
প্রশ্ন : বিয়েতে উকিল বাবা রাখার বিধান কী? কুরআন-হাদিসের আলোকে বিস্তারিত জানতে চাই?
উত্তর : ইসলামে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধু পারিবারিক বন্ধনের বিষয় নয়, বরং একটি সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী বিয়ে সম্পাদন করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য। অথচ আমাদের সমাজে বিয়েকে ঘিরে এমন কিছু রেওয়াজ গড়ে উঠেছে, যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই—বরং তা অনেক সময় বিদাতের পর্যায়ে পড়ে। এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো “উকিল বাবা” রাখা।
উকিল বাবা—এই ধারণাটির উৎপত্তি ইসলামি শরিয়ত থেকে নয়, বরং এটি একটি সংস্কারনির্ভর সামাজিক প্রবণতা। সাধারণত বিয়েতে বর বা কনের পক্ষ থেকে একজন ব্যক্তিকে "উকিল বাবা" হিসেবে নিযুক্ত করা হয়, যাকে ওই বিয়ের অভিভাবক ধরা হয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, দোয়া, উপহার, এমনকি সামাজিক মর্যাদায়ও তাকে বিশেষ স্থান দেওয়া হয়। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এই ধারণাটি ভিত্তিহীন।
ইসলামে বিয়ের জন্য প্রয়োজন হয় কনের অভিভাবকের (ওলি) অনুমতি এবং দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ সাক্ষী। এই নিয়ম কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে নারীর বিয়ে তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া হয়, সেই বিয়ে বাতিল, বাতিল, বাতিল।” (তিরমিজি)
এখানে কোথাও “উকিল বাবা” নামক কোনো কৃত্রিম ভূমিকার অস্তিত্ব নেই। কেউ যদি নিজের কর্তৃত্বে বা সমাজের চাপের মুখে এই রেওয়াজকে অপরিহার্য মনে করে, তাহলে তা বিদআতের শামিল হবে। আর ইসলাম বিদআতের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক বিদাত গোমরাহহি আর প্রত্যেক গোমরাহি জাহান্নামে নিয়ে যাবে।” (সহিহ মুসলিম)
আরেকটি দিক থেকে চিন্তা করলে দেখা যায়, উকিল বাবাকে অনেক সময় এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যেন তিনি পিতৃসুলভ দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ ইসলামে জন্মদাতা পিতাকে বাদ দিয়ে কাউকে মানসিকভাবে “বাবা” হিসেবে গ্রহণ করাও বৈধ নয়। আল্লাহতায়ালা কুরআনে বলেন, “তোমরা তাদের (দত্তক সন্তানদের) নিজেদের পিতার নামে ডাকো, এটাই আল্লাহর কাছে অধিক ন্যায়সঙ্গত।” (সূরা আহযাব: ৫)
সুতরাং এই রেওয়াজ ইসলামি আকিদা-বিশ্বাসেরও পরিপন্থি। এতে করে পিতৃত্বের পরিচয় গুলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। সামাজিকতা রক্ষার নামে এমন বিদাতে যদি প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহাল থাকে, তাহলে একসময় শরিয়তের আসল বিধান চাপা পড়ে যাবে। সুতরাং “উকিল বাবা” ধারণাটি একটি বর্জনীয় প্রথা, যা ইসলামের দৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয়, বিদাত। তাই মুসলিম সমাজের উচিত এ রেওয়াজ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা এবং বিয়ে প্রসঙ্গে কেবল শরিয়তের পথেই চলা।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)