শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
আল্লাহ তায়ালা প্রথমে আকাশ, পৃথিবী এবং ফেরেশতা সৃষ্টি করেছিলেন। এরপর ফেরেশতাদের আকাশে এবং জিনদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করলেন।
জিনেরা দীর্ঘকাল পৃথিবীতে বসবাস করলো। আস্তে আস্তে তাদের ভেতর হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি ও অশান্তি শুরু হলো। এমনকি রক্তপাতও হলো।
উশৃঙ্খল জিন জাতিকে শাস্তি
উশৃঙ্খল জিন জাতিকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে জান্নাতের রক্ষী বাহিনী একদল ফেরেশতা পাঠালেন। এই ফেরশেতাদেরও জিন বলা হতো।
এই বাহিনীর নেতা ছিল ইবলিশ। তার নেতৃত্বে বাকি ফেরেশতারা জিনদের পৃথিবী থেকে বিতাড়িত করলো। তারা পালিয়ে গিয়ে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নিলো। এর মাধ্যমে ইবলিশ জমিন ও আসমানে ফেরেশতাদের মধ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য লাভ করলো এবং সে জান্নাতের প্রধান প্রহরী হলো।
অহংকারী ইবলিশ
সে কখনো পৃথিবীতে, কখনো আসমানে, কখনো জান্নাতে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকলো। এই অনন্য পদমর্যাদা তাকে অহংকারী করে তুললো। সে ভাবতে লাগলো সে-ই সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।
পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি
জিন জাতিকে পৃথিবী থেকে বিতাড়নের মাধ্যমে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়। এরপর আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলেন, পৃথিবীতে তিনি নিজের প্রতিনিধি হিসেবে আরেকটি সৃষ্টি পাঠাবেন। আর আল্লাহ তায়ালার এই প্রতিনিধি হচ্ছে মানব জাতি বা হজরত আদম (আ.)।
এই প্রতিনিধি প্রেরণের উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালার বিধানাবলীর প্রচলন, সত্য পথের আহ্বান, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি।
আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির এই প্রতিনিধিত্বের পরম্পরা শুরু করেছেন হজরত আদম (আ.)-এর মাধ্যমে।
ফেরেশতাদের প্রতিক্রিয়া
আল্লাহ তায়ালার কাছে এই ঘোষণা শুনে ফেরেশতারা বিস্মিত হলেন এবং বিনয়াবনত স্বরে বললেন—
হে আমাদের প্রভু! আপনি মানুষ সৃষ্টি করলে তো আবারো পৃথিবীতে শুরু হবে অশান্তি ও রক্তপাত। আপনার সপ্রশংস স্তুতি ও পবিত্রতা বর্ণনার জন্য আমরাই তো আছি।
ইতোপূর্বে পৃথিবীতে সংঘটিত অশান্তি ও রক্তপাতের অভিজ্ঞতা থেকে তারা এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। পুনরায় পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে এই শঙ্কায় তারা এমন মন্তব্য করেছিলেন।
ফেরেশতারা আগেই জানতে পেরেছিলেন, আদম (আ.)-এর বংশধরদের মধ্যে কেউ কেউ বাধ্য হবে, কেউ অবাধ্য হবে। কেউ মুমিন হবে, কেউ কাফের হবে।
তারা ভেবেছিলেন, ফেরেশতাকুল মানবজাতি থেকে উত্তম। কারণ, ফেরেশতাদের মধ্যে কোনো অবাধ্যতা নেই। আল্লাহর বিধান নিখুঁতভাবে পালনই তাদের স্বভাব। তাই তারা মানব সৃষ্টির বিরুদ্ধে বিনয়ানবত অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন।
কিন্তু তাদের এই ধারণা সঠিক নয় বলে তাদের জানিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। বলেছেন, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।
মানুষের অন্তরে আল্লাহর প্রেম
সত্যিই ফেরেশতারা জানতেন না যে, কোনো কোনো মানুষের অন্তরে আল্লাহ তায়ালা তার প্রকৃত প্রেম দান করবেন এবং তারা আল্লাহ তায়ালার রহস্যময় নৈকট্য লাভ করে ধন্য হবেন। বিশুদ্ধ প্রেমিক হওয়ার গৌরব অর্জন করবেন।
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমার বান্দারা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত আমি তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি। তখন আমি হয়ে যাই তার কান, যা দিয়ে সে শোনে। আমি হয়ে যাই তার চোখ, যা দিয়ে সে শুনে।
আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর আল্লাহ তায়ালা তাকে কিছু বস্তুর নাম শেখালেন এবং ফেরেশতাদের সামনে তা বলতে বললেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরও সেই নামগুলো বলতে বললেন, কিন্তু তারা তা বলতে পারলেন না। তখন তারা বিনয়াবনত হয়ে আল্লাহকে বললেন—
আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই।
পবিত্র কোরআনের বর্ণনায়...
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে—
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জমিনে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।
আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। সুতরাং বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।
তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’। (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩০-৩২)
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)