বৃহঃস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
সান্ডা, দব এবং গুইসাপ—এই তিনটি প্রাণী দেখতে প্রায় কাছাকাছি হলেও প্রকৃতপক্ষে এগুলোর প্রকৃতি ও শরিয়াহ-সংক্রান্ত বিধান ভিন্ন। নিচে প্রতিটির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো:
সান্ডা
সান্ডা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অঞ্চলে, বিশেষ করে বাংলাদেশে দেখা যায়। এটি এক ধরনের সরীসৃপ, যা দেখতে গুইসাপের মতো। যেহেতু এটি উভচর ও সরীসৃপ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, তাই ইসলামী শরিয়াহ অনুসারে একে ভক্ষণ করা হারাম। বিশেষ করে হানাফি মাজহাবে এর ভক্ষণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আরব বিশ্বে সান্ডা সচরাচর দেখা যায় না এবং সেখানকার লোকজন একে খাদ্য হিসেবে গ্রহণও করে না।
দব
দব সাধারণত আরব অঞ্চলের মরুভূমিতে দেখা যায়। সহিহ হাদিসে পাওয়া যায় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে সাহাবিগণ এটি আহার করেছিলেন। যদিও রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে তা খাননি, তবে নিষেধও করেননি। তিনি বলেছিলেন, এটি আমার অঞ্চলের খাবার নয়, তাই আমি আগ্রহ বোধ করি না। তবে তোমরা চাইলে খেতে পারো। (সহিহ বুখারি; সহিহ মুসলিম)
অধিকাংশ ইসলামি স্কলারদের মতে এটি হালাল, তবে হানাফি মাজহাবে এটি খাওয়া হারাম। আরবরা সাধারণত এই দব খেয়ে থাকে।
ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে এতে মতভেদ রয়েছে—
হানাফি মাজহাবে: দব খাওয়াকে অপছন্দনীয় (মাকরুহ) বলা হয়েছে, যদিও হারাম নয়।
মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব: এই মাজহাবগুলোর অধিকাংশ আলেম দব খাওয়াকে বৈধ মনে করেন।
গুইসাপ
গুইসাপ দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল পরিচিত একটি সরীসৃপ। এটি স্থল ও জল উভয় পরিবেশে বিচরণ করে এবং বড় আকৃতির হয়ে থাকে। শরিয়াহ মতে, বিশেষ করে হানাফি মাজহাবে গুইসাপ খাওয়ার অনুমতি নেই। এটি নাপাক, অপবিত্র ও মানুষের স্বাভাবিক রুচির পরিপন্থী প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তা আহার হালাল করা হয়েছে। (সূরা আল-মায়েদা, আয়াত : ৯৬)
হাদিস : রাসুল (সা.) বলেন, সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং এর মৃত প্রাণী হালাল। (তিরমিজি: ৬৯, আবু দাউদ: ৮৩)
এই আয়াত ও হাদিস মাছ জাতীয় প্রাণীর ব্যাপারে প্রযোজ্য হলেও, সরীসৃপ বা উভচর প্রাণীর ক্ষেত্রে ভিন্ন বিধান রয়েছে।
ফিকহবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি
হানাফি মাজহাব
উভচর ও সরীসৃপ প্রাণী—যেমন সাপ, কচ্ছপ, গুইসাপ ও দব—খাওয়া নিষিদ্ধ।
দলিল: আল-হিদায়া, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া, আল-মাবসুত, বাদায়েউস সানায়ে প্রভৃতি কিতাবে এসব প্রাণীকে ‘অপবিত্র ও রুচিবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অন্যান্য মাজহাব
মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব অনুযায়ী দব হালাল হলেও, অধিকাংশ সরীসৃপ প্রাণী নাজায়েজ।
বাংলাদেশের ইসলামী প্রতিষ্ঠানের অবস্থান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন: সহীহ বুখারির অনুবাদে দব খাওয়ার হাদীস উল্লেখ করে বলা হয়, রাসুল (সা.) নিষেধ করেননি। তাই এটি হারাম নয়।
দারুল ইফতা বাংলাদেশ: একটি ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়েছে—দব খাওয়া হানাফি মতে মাকরুহ, হারাম নয়। তবে যারা অন্য মাজহাব অনুসরণ করেন, তাদের জন্য এটি হালাল।
সারসংক্ষেপ ও পরামর্শ
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলমানদের জন্য হালাল-হারাম জেনে খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সান্ডা ও গুইসাপ: এগুলো স্পষ্টভাবে হারাম বা অপছন্দনীয়; তাই এড়িয়ে চলা জরুরি।
দব: যাদের ফিকহ মতে এটি বৈধ, তারা খেতে পারেন। আর যাদের মতে মাকরুহ বা নিষিদ্ধ, তাদের জন্য পরিহার করাই উত্তম।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)