শুক্রবার, ১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২


স্বামীর ভালোবাসা কমে গেলে স্ত্রী এই আমলটি করতে পারেন

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত:৩১ জুলাই ২০২৫, ১৯:১০

ছবি ‍সংগৃহিত

ছবি ‍সংগৃহিত

ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক একটি পবিত্র বন্ধন। ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা—এই তিনটি ভিত্তির ওপর গড়ে ওঠে একটি সুস্থ দাম্পত্য জীবন। তবে বাস্তব জীবনে নানা কারণেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হতে পারে। কখনো স্বামীর ভালোবাসা স্ত্রীর প্রতি কমে যেতে পারে কিংবা স্ত্রীর আবেগও ম্লান হয়ে যেতে পারে। এসব অবস্থায় একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার পাশাপাশি পবিত্র কোরআনের আলোকে আমল করাও হতে পারে শান্তিপূর্ণ সমাধানের একটি উপায়।

স্বামীর ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে কোরআনি আমল

যদি কোনো স্ত্রী অনুভব করেন যে, স্বামীর ভালোবাসা ও মনোযোগ আগের মতো নেই, তাহলে তিনি পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের মাধ্যমে আমল করে দেখতে পারেন। এটি হোক একান্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে এবং বৈধ সম্পর্ক রক্ষার উদ্দেশ্যে।

আয়াতটি হলো— وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّتَّخِذُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اَنۡدَادًا یُّحِبُّوۡنَهُمۡ كَحُبِّ اللّٰهِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ ؕوَ لَوۡ یَرَی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اِذۡ یَرَوۡنَ الۡعَذَابَ ۙ اَنَّ الۡقُوَّۃَ لِلّٰهِ جَمِیۡعًا ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعَذَابِ

উচ্চারণ: ‘ওয়া মিনান নাসি মাইয়্যাত্তাখিযু মিন দুনিল্লাহি আন্দাদাঁ ইউহিব্বূনাহুম কাহুব্বিল্লাহ; ওয়াল্লাজিনা আমানু আশাদ্দু হুব্বাললিল্লাহি ওয়ালাও ইয়ারাল্লাজিনা জালামু ইজ ইয়ারাওনাল আজাবা আন্নালা কুয়্যাতা লিল্লাহি জামীয়াওঁ ওয়াআন্নাল্লাহা শাদীদুল আজাব।’

অর্থ: ‘মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালবাসার মতো ভালবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। আর যদি জালিমগণ দেখে- যখন তারা আজাব দেখবে যে, নিশ্চয় সকল শক্তি আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আল্লাহ আজাব দানে কঠোর।’ (সুরা বাকারা: ১৬৫)

আমল পদ্ধতি

১. পবিত্র হয়ে কয়েকবার দরুদ শরিফ পড়ুন। (দুই রাকাত নামাজ পড়লে ভালো)
২. এরপর নির্জনে বসে উল্লেখিত আয়াতটি ৭ বার পড়ুন।
২. কোনো মিষ্টিজাতীয় খাবারে ফুঁ দিয়ে (দম করে) তা স্বামীকে খাওয়ান।
৩. এই আমল চালিয়ে যান ৭ বা ১১ দিন—নিয়মিত দোয়া ও আল্লাহর কাছে আন্তরিকতা বজায় রেখে।

শর্ত

এই আমল শুধুমাত্র বৈধ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক রক্ষায় কার্যকর হতে পারে। অবৈধ সম্পর্ক বা পরকীয়ার ক্ষেত্রে এ আমল কার্যকর হবে না।

সুসম্পর্কই শান্তিপূর্ণ পরিবারের চাবিকাঠি

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা ও সম্মান না থাকলে তা শুধু ব্যক্তি নয়, পরিবার ও সমাজেও প্রভাব ফেলে। তাই দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও ধৈর্যের পাশাপাশি আল্লাহর উপর ভরসা ও কোরআনের নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরি।

সুন্নাহভিত্তিক ৬টি পরামর্শ

১. নিজের ভুলগুলো খুঁজে দেখা: কর্তব্যে ঘাটতি আছে কিনা যাচাই করা, অহংকার থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা।
২. সৌন্দর্য চর্চা: স্বামীর পছন্দের পোশাক পরা, স্বামীকে উৎফুল্ল রাখতে সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৩. ভালো ব্যবহার: মিষ্টি ভাষায় কথা বলা, স্বামীর পছন্দের খাবার রান্না করা।
৪. ধৈর্য্য ধারণ: রাগ নিয়ন্ত্রণ করা, অল্পতে সন্তুষ্ট থাকা।
৫. প্রয়োজনীয় গোপনীয়তা: ঘরের কথা বাইরে না বলা, স্বামীর দোষ গোপন রাখা।
৬. দোয়া ও ইবাদত: তাহাজ্জুদে কান্নাকাটি করা, ইস্তেগফার বাড়ানো।

সতর্কতা

১. কোনো ধরনের জাদু-টোনা পরিহার করতে হবে
২. শিরকি আমল থেকে দূরে থাকতে হবে

প্রয়োজনীয় পরামর্শ

যদি এই আমল ও সচেতন প্রচেষ্টার পরও সম্পর্কের উন্নতি না হয়, তাহলে উভয় পক্ষের পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। প্রয়োজনে বিশ্বস্ত শরিয়তসম্মত আলেম বা রুকইয়া চিকিৎসকের সাহায্য নিন। ইনশাআল্লাহ কল্যাণ হবে।

কোরআন জীবনের সব সমস্যার দিকনির্দেশনা দেয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের টানাপড়েনেও রয়েছে এর সমাধান। পরিবার গড়ে ওঠে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও আল্লাহভীতির ভিত্তিতে। আসুন আমরা চেষ্টা করি—আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে, কোরআনের আলোকে একটি শান্তিপূর্ণ, পরস্পর শ্রদ্ধাভিত্তিক পরিবার গড়ে তুলতে।

হে আল্লাহ! আমাদের সব বৈধ সম্পর্ককে ভালোবাসা ও বরকতে পূর্ণ করুন এবং আমাদেরকে অশান্তি ও বিচ্ছিন্নতা থেকে হিফাজত করুন। আমিন।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:০৬ ভোর
যোহর ১২:০৫ দুপুর
আছর ০৪:৪৩ বিকেল
মাগরিব ০৬.৪৫ সন্ধ্যা
এশা ০৮:৫ রাত

শুক্রবার ১ আগস্ট ২০২৫