রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
আল্লাহ তা’লার জমিনে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ জায়গা হচ্ছে মসজিদ। হারূন ইবনু মা’রূফ, ইসহাক ইবনু মূসা আল আনসারী (রহ:) ও আবূ হুরায়রাহ (রাযি:) থেকে বর্ণিত হাদিস, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচাইতে প্রিয় জায়গা হলো মাসজিদসমূহ; আর সব চাইতে খারাপ জায়গা হলো বাজারসমূহ” (মুসলিম ৬৭১)।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের জন্য মুমিন বান্দাগণ মসজিদে যান। তবে আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচাইতে প্রিয় জায়গা মসজিদে’র আদব-কায়দা বিষয়ে আমাদের উদাসীনতা ও কম জানার কারণে আমরা অনেক সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, বা অনেক ক্ষেত্রে গুনাহগার হয়ে যাচ্ছি।
পুঃতপবিত্র হয়ে ভালো পোশাকে মসজিদে যাওয়ার কথা থাকলেও আমরা যেকোনো পোশাকেই মসজিদে চলে যাচ্ছি। কখনো কখনো পোশাকে নানা ধরনের লেখা বা ছবি অন্যের সালাতে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তখন লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। দু'আ পড়ে ঘর থেকে বের হওয়া, পথে যেতে যেতেও দু'আ পড়ার নিয়ম।
মসজিদে প্রবেশের পর দু’রাকাত তাহইয়্যাতুল মসজিদের সালাত আদায় করে বসা’র বিধান থাকলেও না জানার কারণে অনেকেই মসজিদে প্রবেশের পর প্রথমে বসে যায় ও পরে সালাত আদায় করে। ফরজ সালাতে খুশু-খুযু (বিনয়, নম্রতা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও তন্ময়তা) সহকারে জামাতে আদায় করা’র সওয়াব সাতাশগুণ বেশি। এখন আবার মোবাইল ফোনের জ্বালায় মসজিদে মুসল্লিরাও অতিষ্ট। অন্যের অসুবিধা’র কথা চিন্তা না করে কেউ কেউ আবার জোরে জোরে যিকির-আজগার, তেলওয়াত ও সুন্নত/নফল সালাত আদায় করছে। অথচ কাউকে কষ্ট দেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ/হারাম (হাদীস সম্ভার:২২২৮)।
এমতাবস্থায়, মসজিদের আদব-কায়দা বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আগ্রহী মুসল্লীদের জন্য বর্ণনা করা হলো। ইচ্ছা করলে কেউ তা সুন্দর করে বোর্ডে লিখে মসজিদের সুবিধাজনক স্থানে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। তাতে অন্যেরাও উপকৃত হবে। নিম্নে সংক্ষেপে মসজিদের আদব-কায়দা বিষয়টি উপস্থাপন করা হলো:
মসজিদের আদব-কায়দা
সাজগোজ করে ভালো পোশাকে মসজিদে যাওয়া। (সূরা আরাফ ৭: ৩১) ।
দু'আ পড়ে ঘর থেকে বের হওয়া, পথে যেতে যেতেও দু'আ পড়া। (আবু দাউদ: ৫৬২, ৫০৯৫; মুসলিম (ই.ফা.): ১৬৭২)।
নফল ইতিফাকের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করা। [দেখুন: আদ্দুরুল মুখতার (১/৪৪৫), আলমাজমু (৬/৪৮৯), আলইনস্বাফ (৭/৫৬৬)]।
মসজিদে যাওয়ার আগে কাচা রসুনপিয়াজ না খাওয়া, মিসওয়াক করা এবং দুর্গন্ধ মুক্ত হয়ে যাওয়া। (বুখারী: ৮৫৫) ।
তাড়াহুড়া না করে ধীরে-সুস্থে মসজিদে গমন করা। (বুখারী: ৬৩৬)।
মসজিদের প্রবেশ ও বাহির পথসমূহ যেকোনো প্রকারেই প্রতিবন্ধকতামুক্ত রাখা। (বুখারী: ২৪৬৫; হাদীস সম্ভার: ২২২৫) ।
ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা ও বাম পা দিয়ে বাহির হওয়া ও দু’আ পাঠ করা। (বুখারী, মুসলিম) ।
মসজিদে প্রবেশের পর দু’রাকাত তাহইয়্যাতুল মসজিদের সালাত আদায় করে বসা। (বুখারী, মুসলিম)
জায়গা খালি থাকলে প্রথম কাতারে বসা। (বুখারী: ৬১৫)
মসজিদে প্রবেশের পর কিবলামুখী হয়ে বসা এবং (নিঃশব্দে) কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকা। (তাবরানী)
জামাত দাঁড়িয়ে গেলে আর কোনো সুন্নাতের নিয়ত না করা। (মুসলিম, ইবনু মাজাহ; তিরমিজী)
মসজিদে অবস্থানকালে মোবাইলের নানাবিদ/অপ্রয়োজনীয় ব্যাবহার অত্যন্ত সীমিত রাখা ও অন্যের বিরক্তির/কষ্টের কারণ না হওয়া। (হাদীস সম্ভার: ২,২২৮)।
জুম্মার দিনে মসজিদে যাওয়ার আগে উত্তমরূপে গোছল, মিসওয়াক, ওযূ করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা। (মুসলিম)
জুম্মার দিনে মসজিদে অবস্থানকালে ফাঁক না রেখে বসা ও ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে না যাওয়া। (ইবনু মাজাহ: ১,১১৫, আবূ দাউদ: ১,১১৮)।
ফরজ সালাতে কাতার সোজা করা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাড়ানো ও মোবাইল বন্ধ রাখা। (বুখারী, মুসলিম)
খুশু-খুযু (বিনয়, নম্রতা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও তন্ময়তা) সহকারে জামাতে সালাত আদায় করা। (বুখারী: ৭৪১, ৭৪২, ৬৪৫)।
ফরজ সালাতের পর কিছু সময় সেখানে বসে অবস্থান করা, অন্যদের বের হতে সুযোগ দেয়া ও সম্ভব হলে সুন্নত সালাতের জন্য স্থান পরির্তন করা । (বুখারী: ৮৩৭; আবু দাউদ: ৪৬৯, ১,০০৬)।
মসজিদে অবস্থানকালে নিরবে-নিঃশব্দে/চুপিসারে যিকির-আজগার করা, দু’আ করা এবং সুন্নত/নফল সালাত আদায় করা। (সূরাঃ আল-আ'রাফ ৭:৫৫; ইবনু মাজাহ: ৮০০; হাদীস সম্ভার: ৩,৬৯৬) ।
মসজিদে অবস্থানকালে উচ্চস্বরে কথা বলা ও সালাত চলাকালীন সময়ে সশব্দে কিতাব পাঠ থেকে বিরত থাকা। (আবূ দাঊদ: ১,৩৩২; হাদীস সম্ভার: ২,২২৬).
মসজিদে বসে অহেতুক দুনিয়াবী কথাবার্তায় মশগুল থাকা থেকে বিরত থাকা। (বায়হাক্বী)
মসজিদ সদা সর্বদা পাক-পবিত্র রাখা এবং ওযুখানা, টয়লেট ও মসজিদ সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। পাক-পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক (মিশকাত: ২৮১, বুখারি: ৪৫৮)।
বিনা প্রয়োজনে/অহেতুক মসজিদের ভেতরে ঘুমানো (সহীহুল বুখারী ও অন্যান্য)।
মসজিদে অবস্থানকালে কোনোভাবেই অন্যের কষ্টের কারণ না হওয়া ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ বজায় রাখা। কাউকে কষ্ট দেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ/হারাম। (হাদীস সম্ভার: ২,২২৮)
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)