বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫, ৫ ভাদ্র ১৪৩২


আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি, অসহায় রাজউক

মিরপুরে তরতর করে উঠছে অনিয়মে ভরা বহুতল ভবনটি

জেহাদ চৌধুরী

প্রকাশিত:১৯ আগষ্ট ২০২৫, ২১:২৫

ছবি- দৈনিক সময়

ছবি- দৈনিক সময়

অনিয়মের অভিযোগে মহামান্য আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মিরপুরে একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে দুটি বেইজমেন্টসহ ভবনটির ১০তলার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে। বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতির পক্ষে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান নর্দার্ন প্রোপার্টিজ ওই ভবনের নির্মাণকাজ পরিচালনা করছে।

মিরপুর ১০, মেইন রোডে বি- ব্লকে ২নং হোল্ডিংয়ে বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতির জায়গায় নির্মাণাধীন ভবনটি ২০১৮ সালে নর্দার্ন প্রোপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহর নামে দু’টি বেইজমেন্টসহ ১৫তলা বিশিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক ও বাণিজ্যিক নকশা অনুমোদন দেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক স্মারক নং-২৫.৩৯.০০০০.০৯৮.৩৩.১৩৬.১৮)।

সূত্র মতে, ১০ কিংবা তার অধিক উচ্চতাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউক অনুমোদিত ছাড়পত্র ও নকশা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বেশকিছু শর্ত যেমন- ভবনের উচ্চতা, ফ্লোর স্পেস ইনডেক্স (ঋঝও), অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ঋঅজ) এবং অন্যান্য স্থাপত্যিক বিষয়গুলো বিধিমালা অনুযায়ী হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশই মানেনি নর্দার্ন প্রোপার্টিজ। ভবনের পাইলিং থেকেই অনিয়ম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর ধাপে ধাপে রাজউক প্রদত্ত নকশার চরম ব্যত্যয় ঘটানোর পাশাপাশি মহামান্য আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দ্রুতগতিতে নির্মাণকাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা।

জানা গেছে, প্রায় একবিঘা জায়গার ওপরে নির্মিত ওই ভবনের নকশায় চারপাশে যে পরিমাণ জায়গা ছাড়ার কথা ছিলো- তা ছাড়েনি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি। ভবনের পেছনের অংশে ৪০ শতাংশ, দুই পাশে ১৫ শতাংশ এবং সামনের অংশে কমপক্ষে ১০ শতাংশের বেশি ডেভিয়েশন করেছে তারা। এছাড়াও পর্যাপ্ত ভয়েড না থাকা, সিড়ি এবং লিফটের জায়গায় অসঙ্গতিসহ নকশায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ঋঅজ) কম থাকলেও তা মানেনি নর্দার্ন কর্তৃপক্ষ। এক কথায়- মোট জমির ৯৫ ভাগেরও বেশি জায়গাজুড়ে নির্মাণ হচ্ছে বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতির ওই ভবন।

উল্লেখিত নানা অনিয়মের কারনে নর্দার্ন কর্তৃপক্ষকে প্রথমে মৌখিক ও পরে একাধিক কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে রাজউক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের রাজউকের একটি নোটিশের (স্মারক নং- ২৫.৩৯.০০০০.০৯৮.৩২.১১৪.২০২২/১৪৩৩) বিপরীতে নর্দার্ন প্রোপার্টিজের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর উচ্চ আদালতে প্রথমবারের মতো রীট পিটিশন (নং-১৪৬৯৪/২০২৩) দাখিল করেন এবং আদালত তা মঞ্জুর করেন। ওই পিটিশনের মেয়াদ ছিলো ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত- এক বছর। পরবর্তিতে নর্দার্ন প্রোপার্টিজের পক্ষে একই ব্যক্তি ২য় দফায় আপিল করলে পিটিশনের মেয়াদ ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আরও এক বছর বাড়িয়ে দেন আদালত।

মহামান্য আদালতের শর্ত মতে, পিটিশন থাকাবস্থায় ভবনের যাবতীয় কাজ বন্ধ থাকার কথা থাকলেও নর্দার্ন কর্তৃপক্ষ তা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভবনের নির্মাণকাজ চলমান রেখেছে। নির্মাণ শুরুর পর থেকে সর্বশেষ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২ বেইজমেন্টসহ ১০তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেছে তারা। অথচ রাজউকের সর্বশেষ নোটিশ এবং আদালতে ১ম পিটিশন দায়েরকালীন সময়ে ২ বেইজমেন্টসহ ৪ তলার ছাদ ঢালাই ছিলো।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, “বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতির ওই ভবনের নকশা অনুমোদন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ১০তলার ছাদ ঢালাই পর্যন্ত রাজউকের নিয়ম লঙ্ঘনের পাশাপাশি মহামান্য আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে নির্মাণকাজ চলমান রেখেছে নর্দার্ন প্রোপার্টিজ। এই সময়ের মধ্যে রাজউকের হাফ ডজনেরও বেশি অথরাইজড অফিসার এবং সমান সংখ্যক ইমারত পরিদর্শক সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন- যাদের প্রত্যেককেই নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন নর্দার্ন কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেশীদের অভিযোগসহ নানা অনিয়ম তদন্তে সাইট পরিদর্শনে গেলে রাজউকের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পাত্তা দেননা তারা। কাউকেই ভবনের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়না এবং অদ্যাবধি কেউই ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে নাই।”

সূত্র মতে, গত ১৬ বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নকশা ছাড়া এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে প্রফেসর ইউসুফ আব্দুল্লাহর নর্দার্ন প্রোপার্টিজ ও প্রাসাদ নির্মাণ নামের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান দুটি। শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের অন্যতম বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা এবং কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকাতে জালিয়াতিসহ নকশার ব্যত্যয় করে প্রায় ২ শতাধিক আবাসিক, বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভবন নির্মাণ করেছে প্রাসাদ নির্মাণ। কিন্তু অদ্যাবধি কোন সংস্থাই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কিংবা মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সম্প্রতি রাজধানীর ৩/১১, কালভার্ট রোড, নয়া পল্টন (১৬৭ ফকিরাপুল পুরাতন) ঢাকায় ২১.৭২ শতাংশ জায়গার ওপরে দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ (পনের) তলাবিশিষ্ট একটি বহুতল ভবন করেছে ‘প্রাসাদ নির্মাণ’। ওই ভবনটির নির্মাণকালেও ব্যাপক জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ভবনটি রাজউকের নকশা ছাড়াই নির্মিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রাসাদ নির্মাণ লিমিটেডের নামে আবু ইউসুফ মোঃ আব্দুল্লাহ রাজউক কর্তৃক ২০০৮ সালের ২০ জুলাই ৩/১১, কালভার্ট রোড, নয়া পল্টনের ভবনটি নির্মাণের লক্ষে দু’টি বেইজমেন্টসহ ১৫ (পনের) তলা ইমারতের নকশা অনুমোদন লাভ করেন। সংশ্লিষ্ট নকশা সংক্রান্ত নথি যাচাই করে ‘মালিকানা স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির’ করণে উক্ত নকশাটি ২০০৯ সালের ২৭ আগষ্ট বিসি কমিটি (বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কমিটি) কর্তৃক বাতিল করা হয়। এরপর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, অথরাইজড অফিসার জোন-৬ এবং বিসি কমিটির বিরুদ্ধে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন ইউসুফ আব্দুল্লাহ (নং-১৭৫৬/১০)। পরবর্তিতে রিট পিটিশনের মেয়াদ বাড়াতে বাড়াতে প্রায় ১০ বছর ঠেকিয়ে দিয়ে রাজউকের নকশা ছাড়াই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে প্রাসাদ নির্মাণ কোম্পানী। বিষয়টি টের পেয়ে ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল হতে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত নকশা দাখিলের জন্য প্রাসাদ নির্মাণ লিমিটেডকে পরপর ৮টি কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে রাজউক (স্মারক নং- ২৫.৩৯.০০০০.১২২.৩২.০৯০.১৯.১৯৭/১৯৮/১৯৯/২০০/২০২/২০৪/২০৮ ও ২২১) কিন্তু তাতেও ভ্রুক্ষেপ করেননি ইউসুফ আব্দুল্লাহ ও তার ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান প্রাসাদ নির্মাণ লিমিটেড। শুধু তা-ই নয়, ওই ভবনটি নির্মাণের শুরু থেকেই ঢাকা ওয়াসার তৎকালীন এমডি তাকসিম এ খানসহ একাধিক প্রতিবেশী রাজউকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আপত্তি জানিয়ে অভিযোগ করলেও রাজউক তখন কোন ব্যবস্থা নেয় নি। রাজউক প্রধান কার্যালয় থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে ৩/১১, কালভার্ট রোডে চারিদিকে কাঁচঘেরা ঝাঁ-চকচকা ১৭ তলা বিশাল ভবনটি ‘মালিকানা স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতির’ করে নির্মিত হলেও অদ্যাবধি ইউসুফ আব্দুল্লাহর টিকিটি স্পর্শ করতে পারেনি রাজউক তথা সংশ্লিষ্ট কেউই।

এ বিষয়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট জোনের একাধিক ইমারত পরিদর্শক তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে দৈনিক সময়কে বলেন, “আমরা খুবই সামান্য পদে চাকরি করি। নর্দানের চেয়ারম্যান মানে ‘বিশাল’ ব্যাপার। আমাদের ঊর্ধ্বতনরাই কখনো এসব লোকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সাহস পায় না। তাদের তুলনায় আমরাতো ‘তুচ্ছ’ মাত্র।” তারা আরও বলেন, ‘নর্দার্ন কিংবা প্রাসাদ নির্মানের কোন প্রজেক্টভিজিটে গেলে কোম্পানীর লোকজন কখনোই আমাদেরকে ভেতরে ঢুকে ভালো মতো দেখার সুযোগ দিতো না। আর বেইজমেন্টে যাওয়ারতো প্রশ্নই ওঠে না।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা দৈনিক সময়কে বলেন, “আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ পতিত সৈরশাসক শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ায় কাউকেই পরোয়া করতেন না। বিশেষ করে শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই) সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহর। রাজউকের তৎকালীন চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে হাসিনা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-আমলা, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই তার ভয়ে তটস্থ থাকতেন। যে কারণে বিগত সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে কেউ টু-শব্দটি পর্যন্ত করেনি। আর এই সুযোগ ও ক্ষমতার প্রভাব কাজে লাগিয়ে গত ১৬ বছর মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় একাধিক বহুতল ভবনের পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছেন- অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই কোন না কোন ঝামেলা আছে।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহুমুখী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সমবায় সমিতির নির্মাণাধীন ভবনটি মিরপুরের সর্বোচ্চ ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম। এখানে প্রায় ৫’শর অধিক দোকানের পজিশন বিক্রি হয়েছে। সর্বনিম্ন ৮০ লক্ষ থেকে শুরু করে কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে প্রতিটি দোকানের পজিশন। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পূর্বে মাকেটের তৎকালীন কমিটি ওইসব দোকান বিক্রি করলেও নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহনের পর বিক্রিত দোকানগুলো পুনরায় অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হচ্ছে- এমন অভিযোগও উঠেছে।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও মিরপুরের মতো ব্যস্ততম জায়গায় একেবারে মেইন রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে নর্দানের ওই ভবনটির কাজ ১০তলার ছাদ অবধি কীভাবে গড়ালো?- এমন প্রশ্নে রাজউকের সংশ্লিষ্ট জোনের অথরাইজড অফিসার দৈনিক সময়কে বলেন, “যতদূর জানি- এই বিষয়টা মহামান্য আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। একটি রিটও চলমান আছে। আদালতের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কিছু করার থাকে না, তবুও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখব। কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

এ বিষয়ে জানতে রাজউকের পরিচালক (জোন-৩) সালেহ্ আহমদ জাকারিয়ার ০১৮১২২**২৬৯ মোবাইল নাম্বারে গত বৃহস্পতিবার থেকে কয়েকদফা কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি। পরবর্তিতে তার হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ পাঠানোর পরও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি কোন রিপ্লাই দেন নি।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি প্রতারণার মামলায় নর্দার্ন প্রোপার্টিজ, প্রাসাদ নির্মাণ ও নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা একটি প্রতারণার মামলায় (মামলা নং-১৪) ওইদিন দুপুরে বনানীর ৬ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে নর্দান ইউনিভার্সিটির অফিস থেকে পিবিআই স্পেশাল ক্রাইম উত্তরের একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। মামলার বাদী ছিলেন- আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম ভুইয়া।

ওই মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে- “২০১৩ সালের মাঝামাঝি আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ নর্দান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস করার জন্য দক্ষিণখানে পাঁচ বিঘা জমি ৫০ কোটি টাকায় কেনার জন্য চুক্তি করেন। এরপর ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট চেকে এবং নগদে ৩০ কোটি টাকা দেন। এরপর তিনি ওই স্থানে নর্দান ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস করার জন্য কাজ শুরু করেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি টাকা পরিশোধে টালবাহানা করতে থাকেন। ২০১৯ সালে বাকি টাকা চাইতে গেলে আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ বাদীকে জানান, টাকা পাবেন না। জমিটি বাদীর বড় ভাই ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। উক্ত জমির দাম বাবদ সব টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। বাদীর দাবি, আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ জালিয়াতি করে জমির রেজিস্ট্র্রেশন সম্পন্ন করেছেন।

এদিকে প্রতারণা, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাতপূর্বক মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারসহ নিজ নামে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চলতি বছরের ২০ মে আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রী হালিমা সুলতানা জিনিয়া এবং তিন সন্তান- সাদ আল জাবির আব্দুল্লাহ, লাবিবা আব্দুল্লাহ, মোসাম্মৎ হাবিবুন নাহারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন মহামান্য আদালত।

সার্বিক বিষয়ে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে ফুয়াদ আহমেদ নামে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সহকারী পরিচালক পরিচয় দিয়ে দৈনিক সময় প্রতিবেদকে তার অফিসে নিমন্ত্রণ জানিয়ে সরাসরি আলাপের প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার মো. মোস্তফা সহিদ একাধিকবার ফোনে, হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে রিপোর্ট না করার অনুরোধ জানান। এরপর রেজা নামে নর্দার্ন প্রোপার্টিজের আরেকজন প্রতিনিধি প্রতিবেদকের মোবাইলে কল দিয়ে বিষয়টি মিমাংসার অনুরোধ জানান। সর্বশেষ গতকাল রোববার দুপুরে ইউনিভার্সিটির পিআরডি শাখার কর্মকর্তা মো. কবিরুল ইসলাম দৈনিক সময় পত্রিকায় তিন মাসের জন্য বিজ্ঞাপন ছাপানোর অনুরোধ জানিয়ে এ প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন।

 

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৪:১৬ ভোর
যোহর ১২:০৩ দুপুর
আছর ০৪:৩৭ বিকেল
মাগরিব ০৬.৩২ সন্ধ্যা
এশা ০৭:৪৮ রাত

বুধবার ২০ আগস্ট ২০২৫