রবিবার, ১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
চুল ঝরে পড়ার সমস্যা কমবেশি অনেকেরই আছে। আর এর মূল কারণ হচ্ছে অযত্ন। ঠিকমতো মাথার ত্বক পরিষ্কার না করলে কিংবা গোছল না করলে এমন সমস্যা লেগেই থাকবে। তবে চুল ঝরে পড়ার একাধিক কারণও থাকতে পারে। শরীরে যদি হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যায়, মাথায় খুশকি বা সংক্রমণ হলেও চুল ঝরে পড়তে পারে।
তবে মাথায় খুশকি নেই, যত্নেও খামতি নেই, তা-ও যদি মাথায় হাত দিলেই চুল উঠে আসে, তার কারণ কী হতে পারে? এর উত্তর অবশ্যই নির্দিষ্টভাবে ত্বকের রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ভালো বলতে পারবেন।
তবে ২০১৮ সালে ‘ডার্মাটোলজি অ্যান্ড থেরাপি’ নামক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা বলছে—উপযুক্ত পুষ্টির অভাব হলে চুল ঝরে পড়তে পারে।
চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছেন পাঁচ, ছয়টা কিংবা দশটা চুল উঠল। সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকে না। কিন্তু চিরুনি বোলালেই যদি প্রতিবার গোছা গোছা চুল উঠতে থাকে, তাহলে তা নিয়ে চিন্তা হওয়াই স্বাভাবিক! ত্বক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অশ্বিনী ভাট বলেছেন, দিনে ৫০-১০০টা চুল ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রতিদিন তার চেয়ে বেশি চুল উঠলে তা নিয়ে ভাবতে হবে।
কার্বোহাইড্রেটের বিপাকে সাহায্য করে ভিটামিন বি১। চুলের বৃদ্ধির জন্য শক্তির প্রয়োজন। তাই ভিটামিন বি১ বা থিয়ামিনের অভাব ঘটলে চুলের ফলিকল দুর্বল হয়ে যেতে পারে। নতুন চুল গজাতেও এতে সমস্যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য বলছে—একজন প্রাপ্তবয়স্কের দিনে ২৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১-এর প্রয়োজন হয়।
রিবোফ্ল্যাভিন পরিচিত ভিটামিন বি২ নামে। শরীর ও কেশের বৃদ্ধির জন্য এই ভিটামিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ভাঙতে এবং কলা-কোষে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। চুলের গোড়া মজবুত করতেও এই ভিটামিনের ভূমিকা থাকে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের তথ্য অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর দিনে ৪.৭ মিলিগ্রাম রিবোফ্ল্যাভিন দরকার।
প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড নামেও পরিচিত ভিটামিন বি৫। শরীরকে শক্তি জোগাতে এবং কোষ বিভাজনে এটি সাহায্য করে। চুলের গোড়ায় শক্তি জোগাতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ভিটামিন বি৫ ভীষণ জরুরি উপাদান। এর অভাবেও চুল ঝরে পড়তে পারে।
প্রোটিন ভাঙতে ও চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ভিটামিন বি৬।
ত্বক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অশ্বিনী বলেন, পাইরিডক্সিন বা ভিটামিন বি৬-এর অভাব হলেও চুল ঝরার সমস্যা হতে পারে।
এ ছাড়া চুলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কেরাটিন নামে এক ধরনের প্রোটিন। বায়োটিনের বা ভিটামিন বি৭-এর অভাব কেরাটিনের উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। এ ভিটামিন গ্লুকোজ, ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যামাইনো অ্যাসিডের বিপাকে সাহায্য করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের দিনে ৩০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিনের প্রয়োজন পড়ে।
ভিটামিন বি৭, ভিটামিন সি, ডিসহ একাধিক খনিজ যেমন চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে, তেমনই তাদের অভাবেও চুল ঝরার সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুধু উল্লিখিত ভিটামিন নয়, ভিটামিন ডি, ই, বি৯, বি১২-এর অভাব হলেও তা চুলের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। শুধু চুল শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য এই ভিটামিনের প্রয়োজন হয়।
সে জন্য চুলের ঘাটতিপূরণে স্বাস্থ্যকর খাবার প্রয়োজন। শাকসবজি, ফলমূল ও ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত আছে এমন খাবার খেতে হবে। মাছ ও ডিম নিয়মিত খেতে হবে। এ ছাড়া প্রতিদিনই মাপমতো এসব খাদ্যতালিকায় থাকা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট কোনো ভিটামিনের ঘাটতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্টও খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া খাবার তালিকায় নানা রকম বাদাম রাখলেও চুল ভালো থাকবে।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)