শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ‘ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে’ প্লট বরাদ্দে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফতরের ১৫ জন ব্যক্তিগত গাড়িচালকের নামেও তিন ও পাঁচ কাঠা আকারে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং স্পষ্টতই অনিয়মের আভাস বহন করছে বলে মনে করছে দুদক।
বুধবার (২৩ জুলাই) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালিত এক এনফোর্সমেন্ট অভিযানে এই তথ্য বেরিয়ে আসে। অভিযানের বিষয়টি বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুদকের জনসংযোগ দফতর নিশ্চিত করেছে।
রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘ঝিলমিল’ প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ হতো ১৩/এ ধারার আওতায় রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চারটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের জন্য।
কিন্তু এনফোর্সমেন্ট টিমের অনুসন্ধানে উঠে আসে, সেই ধারাকে পাশ কাটিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে একাধিক ব্যক্তিগত গাড়িচালককে, যারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার ড্রাইভার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
দুদকের অভিযান চলাকালে রাজউকের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রটোকল অফিসার, মুখ্য সচিব, একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীর গাড়িচালকসহ ১৫ জনের নামে সরকারি জমির প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছেন মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সফিকুল ইসলাম, মো. নূরুল ইসলাম লিটন, মো. রাজন মাদবর, মো. মাহবুব হোসেন, মো. শাহীন, মো. মতিউর রহমান, মো. নূর হোসেন বেপারী, মো. বোরহান উদ্দিন, মো. বেলাল হোসেন, মো. মিজানুর রহমান, মো. বাচ্চু হাওলাদার, মো. নুরুল আলম, মো. নুরনবী (ইমন) এবং মো. শাহীন।
দুদক সূত্র জানায়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজউক সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ কার্যকর করে। তবে বাস্তবে যাদের নামে প্লট বরাদ্দ হয়েছে, তাদের অনেকেরই রাষ্ট্রীয় অবদানের এমন কোনো স্বীকৃতি বা প্রমাণ নেই, যা ১৩/এ ধারার আওতায় প্লট পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। বরাদ্দে রাজনৈতিক প্রভাব, পদবির অপব্যবহার ও ক্ষমতার অপসারণের পর ‘পুরস্কৃতকরণ’-এর প্রবণতা এই প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম ঝিলমিল প্রকল্প সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে এবং প্রাথমিক অনুসন্ধানে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছে। পরবর্তী ধাপে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
রাজউকের আবাসিক প্রকল্পগুলো সাধারণ নাগরিকদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরিমাণ এবং নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনেকেই প্লট না পেয়ে বঞ্চিত হন। সেখানে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বণ্টনে এমন পক্ষপাতমূলক ও অস্বচ্ছ আচরণ সমাজে বৈষম্য এবং দুর্নীতির নতুন উদাহরণ স্থাপন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ ঘটনায় শুধু প্রশাসনিক নয়, রাজনৈতিক প্রভাবেরও একটি সুস্পষ্ট ছাপ রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্লট বরাদ্দের প্রকৃত পেছনের কাহিনি এবং এতে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার দাবি উঠেছে নানা মহল থেকে।
ডিএস /সীমা
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)