বুধবার, ৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


১৪১৫ নদী রক্ষায় কেমন বাজেট চাই?

ড. তুহিন ওয়াদুদ

প্রকাশিত:২ জুন ২০২৫, ১০:৪১

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

আমরা কি নদী বাঁচাতে চাই? এমন প্রশ্নের সোজাসাপ্টা সরকারি জবাব, হ্যাঁ চাই। আসলেই কি আমরা নদী বাঁচাতে চাই? এর সরকারি জবাব আরও দৃঢ়-অবশ্যই চাই। এই মৌখিক চাওয়া এবং বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চাওয়া এ দুটিতে বিস্তর পার্থক্য আছে। চেয়ে বসে থাকলাম আর চাওয়া বাস্তবায়িত হলো এমনটি হওয়ার কোনো সুযোগ তো নেই।

আমাদের দেশে কার্যত কখনোই নদীর সুরক্ষার জন্য বিশেষভাবে পরিকল্পিত কোনো কাজ করা হয়নি। কখনো পরিকল্পনার অভাব, কখনো অর্থের সংকট। এভাবে আমরা দিনের পর দিন কেবল নদীগুলোর সর্বনাশ চেয়ে চেয়ে দেখে আসছি। আমরা মনে করি সময় এসেছে নদীগুলোর পরিচর্যা করার। অন্তর্বর্তী সরকারে নদীর কাজের সাথে সরাসরি যুক্ত কয়েকজন উপদেষ্টা আছেন। তারা আসন্ন বাজেটে নদীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখবেন এটা আমাদের প্রত্যাশা।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হওয়ার পর আমরা বিশেষত পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্ষেত্রে গতিশীলতা লক্ষ্য করছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দেশের নদ-নদীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ ছিল।

দেশের প্রতি জেলায় একটি করে নদী দখল-দূষণ মুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেছে এতে বাজেট লাগছে অনেক টাকা। হঠাৎ করে এই পরিমাণ টাকার জোগান কঠিন। কারণ বাজেটে এই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল না। দেশে এখন তালিকাভুক্ত নদ-নদীর সংখ্যা এক হাজার চারশো পনেরোটি। এ নদীগুলোর প্রাণপ্রবাহ ঠিক রাখতে দখল উচ্ছেদকরণে-খননে মাস্টারপ্ল্যান জরুরি। সেই মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে আসন্ন বাজেটে নদীর জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।

নদীর দখল উচ্ছেদে যে টাকার প্রয়োজন তা দুইভাবে ব্যবস্থা করা সম্ভব। যিনি অবৈধভাবে দখল করে আছেন, তাকে টাকা দিতে বাধ্য করা। দখল উচ্ছেদের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার বিরুদ্ধে শক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যদি সেটি সম্ভব নয় নয় কিংবা যেসব ক্ষেত্রে সম্ভব নয় সেগুলো উচ্ছেদের জন্য বাজেটেই অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন। এই খাতে টাকা না থাকার কারণে এই অজুহাতে অনেক সময় নদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয় না। যাতে এই অজুহাত তৈরি না হয় সেজন্য নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন।

দেশে এখন তালিকাভুক্ত নদ-নদীর সংখ্যা এক হাজার চারশো পনেরোটি। এ নদীগুলোর প্রাণপ্রবাহ ঠিক রাখতে দখল উচ্ছেদকরণে-খননে মাস্টারপ্ল্যান জরুরি। সেই মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে আসন্ন বাজেটে নদীর জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।

আমাদের দেশে নদীগুলোর যে কাজ হয় সেগুলো নদী ধরে হয়। অববাহিকাভিত্তিক হয় না। ফলে ভালো ফল পাওয়া যায় না। বাজেট পর্যাপ্ত থাকে না বলেই একেকটি নদী ধরে ধরে কাজ করা হয়। অবাবাহিকাভিত্তিক নদীর কাজ হলে এক সাথে অনেক নদীর কাজ করা সম্ভব। সেটাই বিজ্ঞানসম্মত নদীব্যবস্থাপনা। সেজন্য পর্যাপ্ত টাকা চাই। বাজেটে যদি এই বরাদ্দ না থাকে তাহলে বৃহৎ পরিসরে এ কাজ করা সম্ভব নয়।

তিস্তা নদীসহ যেসব নদীর জন্য বিশেষ বরাদ্দ জরুরি সেগুলোর জন্য সেগুলোর জন্য বিশেষ বরাদ্দ জনস্বার্থে অপরিহার্য। তিস্তা নদীর সৃষ্টির পর একবারও এর পরিচর্যার কাজ করা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে পাড় সংরক্ষণের যে কাজ হয়েছে তাতে নদীর খুব বেশি লাভ হয়নি। না কমেছে ভাঙন, না কমেছে বন্যা। ২০২৫ সালে প্রথম ভাঙন প্রতিরোধমূলক কাজ শুরু হয়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ সরকারের টাকায় করা সম্ভব। তিন বছর মেয়াদ গণনা করে প্রথম পর্যায়ের টাকা সরকার দিতে পারে।

আমাদের নদী নিয়ে কাজ করে অনেক মন্ত্রণালয়, দপ্তর। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দেশের বড় বড় নদীতে অনেক কাজ করে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এর মাঝে সমন্বয় প্রয়োজন আছে। এই দুই মন্ত্রণালয়ে সমন্বয়ের বড় অভাব।

নদী সুরক্ষার জন্য যে বাজেট ধরা হবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীর তলদেশ যখন ভরাট হয় তখন কার্যত নদীটি মরে যায়। এরকম অনেক নদী আজ মৃত্যুর পথে। এ নদীগুলোর সাথে জলজ জীববৈচিত্র্যের গভীর সম্পর্ক আছে। নদী মরে গেলে কেবল একটি জলরেখার মৃত্যু হয় না। সে অনেককে নিয়ে মরে যায়।

প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্যেও নদীর সুরক্ষা আমাদের করতে হবে। সেজন্য নদীর জন্য যেন বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখা নদী রক্ষা। অতীতের রাজনৈতিক সরকার নদী সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অর্থ বাজেটে বরাদ্দ দিত না। আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার এবছর সেই দুঃখ দূর করুক।

প্রায় ১৫ বছর ধরে নদী সুরক্ষায় কাজ করছি। সরকারিভাবে নদী সুরক্ষার জন্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে কাজ করতে দেখিনি। নদী সুরক্ষার জন্য যে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন সেটিও দেখিনি। কেবল বাজেট হলেও যে নদী সুরক্ষা হবে তা নয়। বাজেটে বরাদ্দকৃত টাকা যথাযথভাবে ব্যয় করতে হবে।

অবাবাহিকাভিত্তিক নদীর কাজ হলে এক সাথে অনেক নদীর কাজ করা সম্ভব। সেটাই বিজ্ঞানসম্মত নদীব্যবস্থাপনা। সেজন্য পর্যাপ্ত টাকা চাই। বাজেটে যদি এই বরাদ্দ না থাকে তাহলে বৃহৎ পরিসরে এ কাজ করা সম্ভব নয়।

আমরা প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা নদীর কাজে ব্যয় করতে দেখি। এই টাকা ব্যয়ে অনিয়মের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট চাকুরিজীবীরা। যাদের মধ্যে আছেন প্রধানত প্রকৌশলীগণ। নদীর কাজ কতটুকু হলো কি হলো না সেটি চোখে না পড়লেও প্রকৌশলীদের ফুলে ফেঁপে ওঠা চোখে পড়ে।

একজন প্রকৌশলীর আয়ের উৎস কী এবং তার যাপিত জীবনে অর্থব্যয়ের ধরন এবং সঞ্চয়ের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায় তিনি কতটা সৎ আর কতটা দুর্নীতিপরায়ণ। এসব কাজে নিয়োজিত একজন সর্বনিম্ন পদের প্রকৌশলীর যাপিত জীবন দেশের সর্বোচ্চ বড় পদের সৎ কর্মকর্তার চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি বিলাসবহুল।

শতভাগ প্রকৌশলী এই ঘৃণ্য পথের যাত্রী এ কথা বলা যাবে না। তবে শতকরা একজনও ভালো পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে তার ব্যয়ও যথাযথভাবে হতে হবে। রাষ্ট্রের একটি মুদ্রাও যেন অপচয় না হয় সেদিকে অবশ্যই কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।

ড. তুহিন ওয়াদুদ ।। অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর
[email protected]

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৩:৪৫ ভোর
যোহর ১১:৫৭ দুপুর
আছর ০৪:৩৬ বিকেল
মাগরিব ০৬:৪৬ সন্ধ্যা
এশা ০৮:০৯ রাত

বুধবার ৪ জুন ২০২৫