মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি সংগৃহিত
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় চলতি বর্ষায় বাহাগিলি ইউনিয়নের (আশ্রয়ণ প্রকল্পের) আশি গ্রামের ৩ শতাধিক মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ওই গ্রামে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না করায় ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
এ অবস্থায় ফুটো হওয়া টিনে পলিথিন মুড়িয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা। তবে এতেও মিলছে না স্বস্তি। ঝড়বৃষ্টিতে ঘরের ভেতরে-বাইরে জমছে পানি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুটো মেরামতের জন্য টিনের চালে পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে। বৃষ্টি বেশি হলে পলিথিন কোন কাজে আসছে না। এ অবস্থায় ঘরের ভেতর ও ঘরের বাইরে পানি জমে শিশু ও বৃদ্ধরা পড়ছেন বেশি বিপাকে। স্যানিটেশনেরও বেহাল অবস্থা। ফলে আশপাশের পরিবেশ দূষিত হয়ে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে আশি গ্রামের বাসিন্দারা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২৫ থেকে ২৬ বছর আগে তৎকালীন সরকার নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বাহাগিলি ইউনিয়নের বাহাগিলি ডাংগাপাড়া গ্রামের চাঁড়ালকাঁটা নদীর তীরবর্তীে এলাকায় প্রায় ৯ একর জমিতে অসহায়, ভূমিহীন ও দুস্থ মানুষের জন্য ৮০টি পরিবারের জন্য ৮০টি ঘর নির্মাণ করে। নির্মাণের পর প্রত্যেক সুবিধাভোগী পরিবার প্রধানদের নামে ১১ শতক করে জমি ওয়াকফ দলিল করে ও একটি করে ঘর হস্তান্তর করা হয়। সেই থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই জায়গাটির নাম আশি গ্রাম নামকরণ করা হয়।
সরকারিভাবে একটি পরিবারের জন্য ১১ শতক জমি ওয়াকফ দলিলসহ একটি আধপাকা ঘর, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও একটি টিউবওয়েল পেয়ে অসহায় দুস্থ ও হত-দরিদ্র পরিবারগুলো আনন্দে দিন কাটাচ্ছিল। কিন্তু দিনের দিনের পর দিন ঘরগুলো সংস্কার না হওয়ায় সেই আনন্দ বিষাদে রূপ নেয়।
আশি গ্রামের বাসিন্দা খুরমা বেগম (৭৫) বলেন, আমাদের নিজের জমি জায়গা কিছুই ছিল না। আগে অন্যের জমিতে বসবাস করতাম। প্রায় দুই যুগ আগে আমার সন্তানদের নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় তখনকার চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সুবিধাভোগীর তালিকায় নাম দিয়েছিলাম। কে জানতো শেষ বয়সে এসে এমন বিপদে পড়তে হবে। বৃষ্টি হলেই ঘরে বাইরে পানি থাকে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা জোবেদা বেগম (৬২) বলেন, আমার ৪ ছেলে ৪ মেয়ে মোট ৮টি সন্তানকে নিয়ে এই গ্রামে এসেছিলাম। প্রথম ৮ থেকে ১০ বছর ভালোই ছিলাম। যদি আগে জানতাম সরকারি বাড়ির এই পরিণতি তাহলে এখানে আসতাম না। গত ১০ বছর ধরে এমন দুর্বিষহ যন্ত্রণা আর সইতে পারছি না। শুধু ১১ শতক জমির জন্য এখানে আসছিলাম। ভাবছিলাম বাড়িসহ ১১ শতক জমি ভালোই। বর্তমানে আমার মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। ছেলেরাও বাইরে কাজ করে। এখানে শেষ জীবনে আর শান্তিতে ঘুমাতে পারবো না। হয়তো বৃষ্টির পানিতে ভিজেই একদিন মৃত্যু হবে।
বাহাগিলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজাইদ্দোলা লিপটন বলেন, আশি গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা খুব কষ্টে জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে তারা রাতের বেলা ঘুমাতে পারে না। আমি বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোর অবস্থা খুব খারাপ; এটা আমি অনেকের কাছ থেকে শুনেছি। বাহাগিলি ইউনিয়নে অবস্থিত আশি গ্রাম (আশ্রয়ণ প্রকল্প) পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সংস্কারের চেষ্টা করবো।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)