সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্থান। এই মসজিদের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। যুগ যুগ ধরে মসজিদটি মুসলমানদের ইবাদতের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একইসঙ্গে মসজিদটি মুসলিমদের আধ্যাত্মিক প্রেরণার উৎস
পবিত্র কোরআনে এই মসজিদের পবিত্রতা ও গুরুত্ব সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। মুসলিমদের কাছে আল-আকসা শুধু একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়— বরং এটি ঈমান, বিশ্বাসের জীবন্ত প্রতীক।
বর্তমানে আল-আকসা নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকটের মধ্যে রয়েছে, তবুও মসজিদটি বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের প্রেরণার উৎস। এখানে নামাজ আদায় সৌভাগ্যের অংশ মনে করা হয়।
কোরআনে আল-আকসা মসজিদ
পবিত্র কোরআনে আল আকসার পবিত্রতার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষত সূরা আল-ইসরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা মহানবী মুহাম্মাদ সা.-এর অলৌকিক মিরাজ রজনীর বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে আল আকসার কথাও বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন :
পবিত্ৰ মহিমাময় তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাতের বেলায় ভ্রমণ করালেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত যার আশপাশে আমরা দিয়েছি বরকত, যেন আমরা তাকে আমাদের নিদর্শন দেখাতে পারি; তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। (সূরা আল-ইসরা, আয়াত : ১)
এই আয়াতে শুধু মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা.-এর ঐতিহাসিক সফরের কথাই বর্ণনা করা হয়নি, বরং আল-আকসা মসজিদ ও তার আশপাশের এলাকায় আল্লাহর পক্ষ থেকে থাকা বরকতের কথাও তুলে ধরে। এই ভূমিতে অনেকে নবী জন্ম নিয়েছেন, বসবাস করেছেন এবং নামাজ আদায় করেছেন— আল আকসা তারই সাক্ষ্য বহন করছে।
কাবা শরিফ মুসলমানদের স্থায়ী কিবলা হওয়ার আগে, মুসলমানরা আল-আকসা মসজিদের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতেন।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের কিবলা ছিল আল আকসা। এর মাধ্যমে ইসলামের সূচনালগ্নেই আল-আকসার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
পরবর্তীতে আল্লাহর নির্দেশে কাবার দিকে কিবলা পরিবর্তন হয়, কিন্তু আজও আল-আকসার প্রতি সেই শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রয়েছে। লীন।
ইসরা ও মিরাজের রাত
ইসরা (রাতের ভ্রমণ) ও মিরাজ (উচ্চে আরোহণ) ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম অলৌকিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই রাতে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা. মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় অলৌকিকভাবে ভ্রমণ করেন এবং সেখানে সমস্ত নবীদের ইমামতি করেন।
এরপর তিনি সেখান থেকে সাত আসমানের ওপর দিয়ে সিদরাতুল মুনতাহায় গমন করেন। এই সফরে অনেক নবীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ লাভ হয় এবং অনেক আলৌকিক দৃশ্য দেখেন, যা মানুষের সীমিত বোধের বাইরে। ফলে আল-আকসা হয়ে ওঠে নমহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা. আধ্যাত্মিক ভ্রমণ ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রতীক।
আল-আকসায় নামাজ আদায়ের বিশেষ ফজিলত
শুধু ইতিহাস, আধ্যাত্মিকতার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয় আল আকসার মাহাত্ম্য। বরং ইবাদত ও ফজিলতের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এক হাদিসে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা. বলেছেন :
‘মসজিদে হারামে এক নামাজ এক লাখ নামাজের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক নামাজ এক হাজার নামাজের সমান এবং বাইতুল মাকদাসে এক নামাজ ৫০০ নামাজের সমান।’ (বায়হাকি)
এই হাদিসের মাধ্যমে মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় ও ইবাদতের ফজিলত সম্পর্কে বুঝে আসে। এখানে নামাজ আদায় একজন মুসলিমকে আল্লাহ তায়ালার আরও নিকটবর্তী করে তোলে।
ইসলামের পবিত্র তিন স্থানের অন্যতম
আল আকসা পৃথিবীতে নির্মিত প্রাচীন মসজিদগুলোর একটি। কাবা ঘরের পর মসজিদুল আকসা নির্মিত হয়েছে বলে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবু যর রা. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদ স্থাপিত হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোন মসজিদ? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। বললাম, এই দুইয়ের নির্মাণের মাঝে কত সময়ের ব্যবধান? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩৬৬)
এই হাদিস থেকে বুঝা যায় আল আকসা পৃথিবীর প্রাচীন স্থাপনাগুলোর একটি। এবং এটি ইসলামের তিনটি সর্বোচ্চ পবিত্র স্থানগুলোর একটি। অন্য দুটি হচ্ছে—মসজিদুল হারাম (মক্কা) এবং মসজিদে নববী (মদিনা)। এই তিনটি স্থান মুসলমানদের জীবনে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে।
এই মসজিদগুলো শুধু ইবাদতের স্থান নয়—ঈমান, মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের জীবন্ত নিদর্শন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)