সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান, যেখানে ইবাদতের প্রতিটি রূপ নির্দিষ্ট নীতিমালার অধীন। কোরআন ও হাদিসই মুসলমানদের জন্য চূড়ান্ত পথনির্দেশক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যুগে যুগে মানুষের আবেগ ও অজ্ঞতা ইসলামের পবিত্র রীতিনীতি বিকৃত করেছে। বিশেষ করে ইসলামি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররমে অনেক কুসংস্কার, বিদআত ও সমাজ সংস্কৃতির মিশ্রণে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য ঘোলাটে হয়ে গেছে।
মহররমকে সম্মানিত মাস হিসেবে গণ্য করে বেশি বেশি নফল রোজা, তাওবা, ইস্তেগফার ও নেক আমলে মগ্ন থাকাই হলো মুমিনের করণীয়। অথচ বাস্তবতা হলো- সমাজের এক শ্রেণি এই মাসকে শোক, মাতম, তাজিয়া, হুসাইনির খিচুড়ি কিংবা কল্পিত মোজেজা ও বানোয়াট ঘটনা উদযাপনের সময় বানিয়ে ফেলেছে, যার কোনো ভিত্তি নেই কোরআন-হাদিসে।
এই প্রতিবেদনে আমরা তুলে ধরব—মহররম মাসে প্রচলিত সেইসব রসম-রেওয়াজ ও বিদআত, যেগুলো থেকে একজন সচেতন মুসলমানের দূরে থাকা জরুরি। কারণ বিদআত শুধু ইসলামকে বিকৃত করে না, বরং প্রকৃত সুন্নাহকে আড়াল করে দেয়।
১. আশুরাকে শোকের দিন বানানো
হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদতের জন্য কান্নাকাটি, মাতম, বুকে পেটানো, কালো কাপড় পরা, শোক র্যালি ইত্যাদি শরিয়তের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (জাহেলি) কায়দায় বুক চাপড়ায় ও মুখ চিরে—সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি: ১২৯৭; সহিহ মুসলিম: ১০৩)
২. তাজিয়া মিছিল ও মাতম
আশুরার দিন কাফেলা বের করে বাঁশ, কাদা মাটি, লাঠি দিয়ে তাজিয়া বানিয়ে এক শ্রেণির মানুষ শোক প্রকাশ করে। শরিয়তের দৃষ্টিতে এসব বিদআত। কারণ রাসুল (স.) ও সম্মানিত সাহাবিরা এমন কিছু করেননি। তাজিয়া বানানোতে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এবং এগুলো মূলত শিয়া সমাজ থেকে এসেছে।
৩. নির্দিষ্ট খাবার রান্না করা (বিশেষত ‘হুসাইনির খিচুড়ি’)
আশুরার দিনে বিশেষভাবে ‘হুসাইনির খিচুড়ি’ রান্না করে বিতরণ করা হয়। এমনভাবে খাবারকে নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ ফজিলতের ধারণা নিয়ে বিতরণ করা সুন্নাহর বিপরীত। রাসুল (স.) বা সাহাবিরা এটি কখনো করেননি।
৪. আশুরার দিনে গোসল করলে বছরজুড়ে সুস্থ থাকবে—এই বিশ্বাস
১০ মহররমে গোসল করলে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে—এমন বিশ্বাস ও কুসংস্কার ইসলাম অনুমোদন করে না। এসব ভিত্তিহীন কাজ। এধরণের কোনো বক্তব্য কোরআন-হাদিসে নেই, তাই তা বর্জনীয়।
৫. আশুরাকে উৎসব বা আনন্দের দিন হিসেবে উদযাপন করা
নতুন জামা-কাপড় পরা, সাজ-সজ্জা, হালুয়া বানানো ইত্যাদিকে আশুরার বিশেষ আমল মনে করা বড় ভুল। আশুরা মূলত ইবাদতের দিন; আনন্দ বা উৎসবের দিন নয়।
৬. ‘আশুরার মোমবাতি’ জ্বালানো ও বিশেষ কবিতা পাঠ
আশুরার রাতে বা দিনে অনেক জায়গায় মোমবাতি জ্বালিয়ে নির্দিষ্ট কবিতা বা মার্সিয়া পাঠ করা হয়। এসব কাজ বিদআত এবং শোকের নাম করে লোক-দেখানো আমল।
৭. ‘আশুরার রক্তদানে মুক্তি’ বা সওয়াবের প্রচারণা
কিছু সংস্থা আশুরার দিনে রক্তদানকে আশুরার ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে ফজিলতের কাজ বানিয়ে ফেলে। মানবিক দানকে বিশেষ দিনের ইবাদতের মর্যাদা দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই।
কী করবেন এই দিনে?
১. আশুরার রোজা (৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মহররম) রাখা।
২. কোরআন তেলাওয়াত ও ইস্তেগফার।
৩. হজরত মুসা (আ.)-এর মুক্তির স্মরণে শুকরিয়াস্বরূপ রোজা পালন।
৪. বিদআত থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে দূরে রাখা।
রাসুল (স.) বলেন- ‘তোমরা আমার সুন্নাহ ও খলিফাদের সুন্নাহ আঁকড়ে ধরো, নতুন আবিষ্কৃত বিষয় থেকে বেঁচে চলো।’ (আবু দাউদ: ৪৬০৭)
মূলত, মহররম ইসলামে সম্মানিত মাস। তবে এই সম্মান রক্ষা করতে হবে বিদআত ও সংস্কারবিরোধী আচরণ থেকে দূরে থেকে, কেবল কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ইবাদত করে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)