মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
জার্মানিতে ঠিক ১০ বছর পর আবারও ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ শিরোপা জিতলেন লুইস এনরিকে। আগেরবার বার্সেলোনার হয়ে বার্লিন, এবার প্যারিসিয়ান সেইন্ট জার্মেইকে নিয়ে তিনি মিউনিখে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলেন। কিন্তু এই দুই শিরোপায় ঘুরেফিরে এলো এনরিকে কন্যা জানার স্মৃতি। যদিও এবার সে সশরীরে অনুপস্থিত, তবে ছিলেন পিএসজির খেলোয়াড়-সমর্থক থেকে শুরু করে সবার মণিকোঠায়। ফাইনালে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে ট্রফিও নিজের মেয়েকেই উৎসর্গ করলেন এনরিকে।
মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় একপেশে ফাইনালে ইন্টারকে ৫-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ট্রফি ক্যাবিনেটে পিএসজি যোগ করল নতুন এক শিরোপা। সেইসঙ্গে নিশ্চিত হলো তাদের ট্রেবল শিরোপাও। ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের ফাইনালের ইতিহাসে এর আগে কোনো দল ৫ গোলের ব্যবধানে জেতেনি। এই মুকুটের মাহাত্ম্য আলাদা। গোটা ফুটবল দুনিয়ার কাছে না হলেও এনরিকের কাছে তো বটেই। ১০ বছর আগে বার্সেলোনার ম্যানেজার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার দিন মেয়ে পাশে ছিল। ২০১৯ সালে ক্যান্সারের কাছে হার মানা ‘জানা’র অবস্থান এখন কেবলই এনরিকের হৃদয়ে।
২০১৫ সালে বার্সেলোনা শেষবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিল। এনরিকের দলের এই শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিতে মাঠে হাজির ছিলেন তার মেয়ে। বার্লিনের অলিম্পিক্স স্টেডিয়াম মাঠে বার্সেলোনার পতাকা নিয়ে দৌড়েছিল পাঁচ বছরের জানা। পরে মেয়েকে পাশে রেখেই সেই পতাকা মাটিতে পুঁতে দেন এনরিকে। কিন্তু এবার আর তার নামে ওঠা জয়ধ্বনি শোনা হলো না মেয়ের। হাড়ের ক্যান্সারে ভোগা মেয়েকে নিয়ে পাঁচ মাস বেশ দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন এনরিকে, কিন্তু শেষটা হলো চোখের জলে। নয় বছরের মেয়ের শোকে তৎকালীন এই স্প্যানিশ কোচ নিজেকে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে নিয়ে যান।
ফাইনালের আগে এনরিকে বলেছিলেন, ‘ফাইনালে আমার মেয়ে সঙ্গে থাকবে না। শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকবে না। তবে ও আমার সঙ্গেই থাকবে। মানসিকভাবে থাকবে। এই জন্যই ম্যাচটা আমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’ নিজেদের সাফল্যের পথে টেনে তোলা এনরিকের মেয়ে পিএসজি সমর্থকদের কাছেও পরম আপন হয়ে ওঠে। তাই তো তারা মিউনিখের গ্যালারিতে জানা’র প্রতীকি ছবি দিয়ে বানানো বিশাল এক টিফো (ব্যানার) নিয়ে হাজির হয়। যা পুরস্কার বিতরণী শেষে গ্যালারিতে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এনরিকেও মেয়েকে জয় উৎসর্গ করে বলেন, ‘সে সবসময়ই আমার হৃদয়ে থাকে।’
ফাইনালে পিএসজির ঐতিহাসিক জয়ের পর এনরিকে গায়েও দেখা যায় বিশেষ এক টি-শার্ট। যেখানে দেখা যায় ছোট্ট জানা পিএসজির পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে আছে, পাশে লেখা– ‘We are the Champ!’ আর গ্যালারিতে জানার গায়ে পিএসজির ৮ নম্বর জার্সি পরিহিত টিফো নজর এড়ায়নি এনরিকের। যা নিয়ে চ্যাম্পিয়ন কোচ বলেন, ‘খুব ভাল লেগেছে। সমর্থকরা আমার পরিবারের জন্য যে টিফো তৈরি করেছেন, সেটি ভীষণ আবেগপূর্ণ। সব সময় মেয়ের কথা ভাবি আমি। জানাকে মনে রাখার জন্য আমার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার প্রয়োজন নেই। ও সব সময় আমার সঙ্গে থাকে। বিশেষ করে ম্যাচ হেরে গেলে।’
এনরিকের দিন শুরু হয় নাকি প্রতিদিন সকালে অনুশীলন শুরুর আগে ২০-২৫ মিনিট খালি পায়ে ঘাসের উপর হেঁটে। যেখানে একসময় তারই হাত ধরে থাকত মেয়ে জানা। এরপর পুরো দিনের পরিকল্পনাটাও তখনই করে ফেলেন এনরিকে। মেয়ের স্মৃতি হৃদয়ে জমা রেখে এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মনোযোগ ফেরালেন। পিএসজিকে ইতিহাসের অংশ করে নেওয়া এই কোচ বলেন, ‘প্রথম দিন এসেই আমি বলেছিলাম আমরা গুরুত্বপূর্ণ ট্রফি জিততে চাই। প্যারিস কখনোই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেনি। আমরা প্রথমবার সেটা করলাম। অনেক মানুষকে খুশি করতে পারার অনুভূতি অসাধারণ!’
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)