শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের আসর বসেছে যুক্তরাষ্ট্রে। তবে আদতে তা যুক্তরাষ্ট্রে হচ্ছে কি না, তা নিয়ে ধাঁধায় পড়ে যেতে পারেন আপনি। এই টুর্নামেন্ট যে রীতিমতো দক্ষিণ আমেরিকান উৎসবে রূপ নিয়েছে! গ্যালারিতে যেমন গলা ফাটাচ্ছেন বোকা জুনিয়র্স, রিভার প্লেট, ফ্লামেঙ্গো ও পালমেইরাস সমর্থকরা, তেমনি মাঠেও চলছে তাদেরই জয়জয়কার। এ পর্যন্ত ৮ ম্যাচ খেলেছে দলগুলো। ছয়টি কনমেবল ক্লাবই এখন পর্যন্ত রয়েছে অপরাজিত—পাঁচটি ম্যাচে জিতেছে, তিনটিতে করেছে ড্র।
লাতিন আমেরিকানরা স্বভাবগতভাবেই বেশ আমুদে। বৈশ্বিক আসরে তাদের এ রূপের দেখা মেলে হরহামেশাই। এবারের ক্লাব বিশ্বকাপেও মিলছে ভালোভাবেই। সে কারণেই এখন মিয়ামির সৈকতে গেলে তা কোপাকাবানা বিচ কি না, সে প্রশ্নটা করতে পারেন নিজেকে। কিংবা টাইমস স্কয়ারে গেলে মনে হতে পারে আর্জেন্টিনার প্লাজা দে মায়ো। আবার সিয়াটলের গ্যালারিতে রিভার প্লেটের গান শুনে আপনার লাগতে পারে আপনি বুঝি এস্তাদিও মনিউমেন্তালে চলে এসেছেন!
আমুদে লাতিনদের আনন্দ-যাত্রায় তাল দিচ্ছে তাদের দলগুলোও। সেটা না হলে সমর্থকদের আগ্রহেও ভাটা পড়ার সুযোগ ভালোভাবেই ছিল। তা হতে দেয়নি কনকাকাফের দলগুলো। লাতিন আমেরিকা থেকে আসা ৬ দল– ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের কোপা লিবার্তাদোরেসের চ্যাম্পিয়ন পালেমাইরাস, ফ্লামেঙ্গো, ফ্লুমিনেন্স আর বোতাফোগোর, কিংবা ক্লাব কোএফিশিয়েন্সিতে শীর্ষ দুই দল বোকা জুনিয়র্স আর রিভারপ্লেটের কেউই যে এখন পর্যন্ত হারের মুখ দেখেনি!
ইউরোপের ক্লাবগুলোর অর্থনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে অনেক সময়ই দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলোকে তাদের সেরা খেলোয়াড় বিক্রি করতে হয়। তবে ক্লাব ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে তাদের সবার লড়াইটা এখন সেই ইউরোপীয়দের সামনে নিজেদের মেলে ধরার, একটা বার্তা দেওয়ারও।
রিভার প্লেট টেক্সাসের নেতা হুয়ান পাবলো পাচেকো যেমন বললেন, ‘আমাদের দলে খেলা অনেকেই এখন লিভারপুল বা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলছে। ইউরোপের আলো ঝলমলে জগতে যাওয়ার পর ওরা ভুলে যায় দক্ষিণ আমেরিকার লড়াইটা কেমন ছিল। আমরা ওদের দেখাতে চাই, এখনো আমরা আছি।’
সে কাজটা লাতিন আমেরিকান প্রত্যেকটা দলই করেছে এখন পর্যন্ত। ভালোভাবেই জানান দিয়েছে নিজেদের অস্তিত্ব। শুরুটা হয়েছিল পালেমাইরাসকে দিয়ে। ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগজয়ী পোর্তোকে দিয়েছে রুখে। পরের দিন বোতাফোগোর প্রতিপক্ষ অবশ্য সহজই ছিল। মেজর লিগ সকারের দল সিয়াটল সাউন্ডার্সকে ২-১ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল।
আর্জেন্টাইন ক্লাব বোকা জুনিয়র্স তাদের টুর্নামেন্ট শুরু করেছে বেনফিকাকে ২-২ গোলে রুখে দিয়ে। সে ম্যাচেও আবার ছিল আর্জেন্টাইনদেরই জয়জয়কার। বেনফিকা যে দুই গোল করেছে, তা আবার এসেছে দুই আর্জেন্টাইনের কাছ থেকে, আনহেল দি মারিয়া আর নিকলাস অতামেন্দি ছিলেন দুই গোলদাতা। ম্যাচটা ২-২ গোলে শেষ হলেও আর্জেন্টাইনরা তাই বলতেই পারেন, ‘হাহ হা! শেষ হাসিটা তো আমরাই হেসেছি’!
তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিভারপ্লেট অবশ্য শুরুটা করেছে জয় দিয়ে। ৩-১ গোলে হারিয়েছে জাপানি দল উরাওয়া রেড ডায়মন্ডসকে। ফ্লামেঙ্গোর প্রতিপক্ষও তুলনামূলক সহজই ছিল। আফ্রিকান দল এল তিউনিসকে ২-০ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করে তারা। ওদিকে ফ্লুমিনেন্স জার্মান দল বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে গোলশূন্য ড্রয়ে রুখে দিয়েছে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই।
এদিকে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় চমকটা এসেছে আজ। দিনের শুরুতে পালেমাইরাস আমিরাতের দল আল আহলিকে ২-০ গোলে হারিয়েছে। চমক সেটা নয়, চমকটা দেখা গেছে দিনের শেষ ম্যাচে। দোর্দণ্ড প্রতাপে ইউরোপ জয় করে পিএসজি বিশ্বজয়ের বার্তাও দিয়ে রেখেছিল প্রথম ম্যাচে ৪-০ গোলে ‘স্বমহাদেশীয়’ অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদকে উড়িয়ে দিয়ে। সেই পিএসজিকে আজ মাটিতে নামিয়ে এনেছে ব্রাজিলের দল বোতাফোগো। এবারের আসরের প্রথম দল হিসেবে তারা চলে গেছে টুর্নামেন্টের নকআউটেও।
ক্লাব বিশ্বকাপটা লাতিন কোনো দল জিততে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে টুর্নামেন্টের শুরুটা যেভাবে করল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার দলগুলো, তাতে ইউরোপ একটা বার্তা ভালোভাবেই পেয়ে গেছে। আর তা হলো, বিশ্বকাপটা মোটেও সহজ কিছু হতে যাচ্ছে না তাদের জন্য!
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)