রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসে আক্রান্ত নারী-পুরুষ, প্রতিরোধে ভ্যাকসিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত:২৫ মে ২০২৫, ১০:২২

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

যৌনাঙ্গ ও জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। এ ক্যানসারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)। প্রতি তিনজন পুরুষের মধ্যে একজন হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসে আক্রান্ত। যা থেকে পরবর্তীতে হতে পারে পুরুষের যৌনাঙ্গে ক্যানসার, মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যানসার (সার্ভিকাল ক্যানসার)।

সব ক্যানসার প্রতিরোধ করা যায় না কিন্তু জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য বিশ্ব টিকা প্রথম বাজারে আসে ২০০৬ সালের দিকে। এইচপিভি ভাইরাসের মাধ্যমে জরায়ুমুখে ক্যানসার হয় আর এ ভাইরাসের বিরুদ্ধেই ‘এইচপিভি ভ্যাকসিন’ আবিষ্কার হয়েছে।

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস নিয়ে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বাসব মুখোপাধ্যায় বলেন, এই ভাইরাসের ১০০টি টাইপ রয়েছে। তার মধ্যে ‘টাইপ ৬’, ‘টাইপ ১১’ কম ঝুঁকিপূর্ণ। যা থেকে পুরুষ-মহিলাদের মধ্যে নিম্নাঙ্গে আঁচিল কিংবা গুটি দেখা যায়। তবে টাইপ ১৬ অথবা টাইপ ১৮ শরীরে প্রবেশ করলেই বিপদ। যা থেকে পরবর্তীতে হতে পারে পুরুষের যৌনাঙ্গে ক্যানসার, মেয়েদের জরায়ুমুখের ক্যানসার।

বিশ্বব্যাপী নারীদের ক্যানসারের আক্রান্ত ও মৃত্যু হারের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে জরায়ুমুখ ক্যানসার। বাংলাদেশে এর স্থান দ্বিতীয়। জরায়ুমুখ ক্যানসার ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী জরায়ুমুখ ক্যানসারে মৃত্যু হারের ৯০ শতাংশই ঘটে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল, মধ্যম আয় এবং অনুন্নত দেশগুলোতে।

কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. দীপান্বিতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুরুষাঙ্গের ক্যানসারে মৃত্যুর হার কম। তা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মহিলাদের মধ্যে সার্ভিকাল ক্যানসার বা জরায়ুমুখ ক্যানসার ক্রমশ বাড়ছে। চিত্তরঞ্জনে ক্যানসার আক্রান্ত যত মহিলা আসছেন তার মধ্যে ৭০ শতাংশ এই সার্ভিকাল ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রত্যেকেই আসছেন স্টেজ থ্রি অবস্থায়। শরীরে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস প্রবেশ করলে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এর থেকে বাঁচতে এইচপিভি ভ্যাকসিন নিতে হবে। ইতোমধ্যেই ভারতের বিহারে সরকারি স্তরে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। যার জন্য সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছে ৯৪ লাখ ভ্যাকসিনের অর্ডার দেওয়া হয়েছে।

কলকাতার সব বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে এইচপিভি ভ্যাকসিন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের দেওয়া যায় এই ভ্যাকসিন। প্রথমবার নেওয়ার ৬ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। যদি কেউ ১৪ বছরের মধ্যে না নেয় সেক্ষেত্রে নিতে হবে তিনটি ডোজ। ১৪ থেকে ২৬ বছর বয়সীদের জন্য প্রথম ডোজ নেওয়ার ২ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ, প্রথম ডোজ নেওয়ার ৬ মাসের ব্যবধানে তৃতীয় ডোজ নিতে হবে।

মানবদেহে কোষীয় এবং অ্যান্টিবডি এই ২ ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। এইচপিভি ভাইরাস ২ ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতাই প্রতিরোধ করতে পারে। এইচপিভি ভ্যাকসিন ২ ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উজ্জীবিত করে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। দেখা যায় এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়ার ১ মাসের মধ্যেই অ্যান্টিবডি রক্তে চলে আসে, ৬ মাস পর সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যায় সাধারণত। বলা হয়ে থাকে ৬ মাস পর অ্যান্টিবডি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় শরীরে। ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।

তবে আশার কথা হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন একটি ভ্যাকসিন আনার চিন্তা করছে। এই ভ্যাকসিনটি যা ৪৫ বছর পর্যন্ত নেওয়া যাবে। এটি এক ডোজের ভ্যাকসিন।

সম্পর্কিত বিষয়:

আপনার মতামত দিন:

(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)
আরো পড়ুন

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

নামাজের সময়সূচি

ওয়াক্ত সময়সূচি
ফজর ০৩:৪৮ ভোর
যোহর ১১:৫৬ দুপুর
আছর ০৪:৩৫ বিকেল
মাগরিব ০৬:৪২ সন্ধ্যা
এশা ০৮:০৩ রাত

রবিবার ২৫ মে ২০২৫