মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২
ছবি সংগৃহীত
বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু স্বর্ণ সাধারণত বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় না। খনি থেকে যখন স্বর্ণের আকরিক (গোল্ড আয়ন) তোলা হয়, সেগুলোতে অনেক সময় যথেষ্ট পরিমাণে বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি থাকে। রাসায়নিকের সাহায্যে যেসব বিষাক্ত উপাদান অপসারণের পরেই মেলে বিশুদ্ধ সোনা।
তবে বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পেয়েছেন, যারা খাদ্য হিসেবে সেই বিষাক্ত আকরিক বা গোল্ড আয়ন গ্রহণ করে এবং তারপর যখন মলত্যাগ করে— সেই মলে থাকে যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুদ্র স্বর্ণের কণা উপস্থিতি এবং সেসব স্বর্ণ কণা পুরোপুরি বিশুদ্ধ বা খাঁটি। এই ব্যাকটেরিয়ার নাম কিউপ্রিয়াভিডাস মেটালিডুরান্স। নলাকৃতির এই জীবাণুটি অত্যন্ত বিষাক্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার অনন্য ক্ষমতা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন এক ব্যাক্টেরিয়ার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। কয়েক বছর আগে, অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকশো কিলোমিটার ব্যবধানের দূরে দু’টি সোনার খনিতে প্রথম ধরা পড়ে এর অস্তিত্ব। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে অনুষ্ঠিত মধ্যে বেড়ে ওঠা ব্যাক্টেরিয়া আবিষ্কার করেছিলেন গবেষকেরা। সম্প্রতি মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ‘দ্য গ্রেট ওয়ার্ক অফ দ্য মেটাল লাভার’ শীর্ষক একটি শিল্প ও জৈবপ্রযুক্তির প্রদর্শনীতে এই সাফল্যের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন মিশিগান স্টেট বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের অন্যতম গবেষক অ্যাডাম ব্রাউন।
মিশিগানের বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, সাধারণত স্বর্ণ কিংবা দস্তার খনিতে মেলে এই কিউপ্রিয়াভিডাস মেটালিডুরান্স। এদের প্রধান খাবার ধাতুর আকরিক। খনির যে স্তরে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো থাকে, সেখানকার পরিবেশ এবং আকরিক বেশ বিষাক্ত থাকে এবং কোনো প্রাণের পক্ষে সেখানে বেঁচে থাকা কার্যত প্রায় অসম্ভব।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে খনির এমন বিষাক্ত পরিবেশেও বেশ ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে এই বিচিত্র ব্যাকটেরিয়া, খাবার হিসেবে গ্রহণ করছে বিষাক্ত গোল্ড আয়ন বা স্বর্ণের আকরিক এবং মলের সঙ্গে বের করছে খাঁটি স্বর্ণের কণা।
অ্যাডাম ব্রাউন জানান, ব্যাকটেরিয়াটির সক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য তারা খনি থেকে সেগুলোর নমুনা তুলে এনে স্বর্ণ মিশ্রিত বিষাক্ত রাসায়নিক তরল গোল্ড ক্লোরাইডের মধ্যে রেখে দিয়েছিলেন।
এর ফলাফলও হয়েছিল বিস্ময়কর। বিজ্ঞানীরা দেখতে পান যে ব্যাকটেরিয়াগুলো ওই বিষাক্ত তরলের মধ্যে অবিশ্বাস্যভাবে বংশবৃদ্ধি করছে এবং শুধু তা ই নয়, যে পাত্রের মধ্যে যৌগটি রাখা হয়েছিল, সেটির তলায় জমতে দেখা গেছে ২৪ ক্যারেটের বিশুদ্ধ স্বর্ণের কণা।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই ব্যাকটেরিয়ার পাচনতন্ত্রে এমন একটি উৎসেচক বা এনজাইমের উপস্থিতি রয়েছে, যার বলে এটি আকরিকের বিষাক্ত উপাদন খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে হজম করা এবং আকরিক থেকে বিশুদ্ধ স্বর্ণ উগরে দিতে সক্ষম।
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মতে, আকরিক থেকে স্বর্ণ নিষ্কাশন শিল্পকে পরিবেশ বান্ধব করার ক্ষেত্রে কিউপ্রিয়াভিডাস মেটালিডুরান্স একটি নতুন সম্ভাবনার নাম।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)