শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২
ছবি- সংগৃহীত
মানুষের সূচনা হয়েছিল হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)–এর মাধ্যমে। আল্লাহর হুকুম অমান্য করায় তাদের জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়। পৃথিবীতে এসে মৃত্যুর মাধ্যমে তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। তাদের বিদায়ের শত শত বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের ঘটনা আজও শিক্ষণীয় ও প্রাসঙ্গিক।
আমরা সবাই একই কাদামাটি থেকে সৃষ্টি, একই স্রষ্টার হাতে গড়া। তাদের জীবনের পরীক্ষাগুলো আমাদের জন্যও পথনির্দেশক। হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)–এর ঘটনা থেকে চারটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা তুলে ধরা হলো—
১. জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
আল্লাহ তায়ালা হজরত আদমকে সবকিছুর নাম শিখিয়েছিলেন এবং ফেরেশতাদের সামনে তা প্রমাণ করেছিলেন। (সূরা বাকারা, আয়াত : ৩১)
এ থেকেই বোঝা যায়—জ্ঞান ইসলামে কত উচ্চ ও মর্যাদাপূর্ণ। ‘ইলম’ শুধু ধর্মীয় জ্ঞানেই সীমাবদ্ধ নয়; দুনিয়াবি জ্ঞানও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, জ্ঞান মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে এবং জ্ঞান অর্জন ও এর সঠিকভাবে আমল মানুষকে ফেরেশতাদের থেকেও মর্যাদাশীল করে তোলে।
নবী করিম (সা.)–এর প্রতি আল্লাহ তায়ালার প্রথম নির্দেশ ছিল ‘ইকর’—পড়ো।
সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই ঈমান, আল্লাহর পরিচয় এবং ইসলামী আদর্শ শেখানো জরুরি। পাশাপাশি দুনিয়াবি জ্ঞান শেখানোর ক্ষেত্রেও অবহেলা করা যাবে না। জীবিকা নির্বাহ ও সমাজে অবদান রাখার জন্য এটি অপরিহার্য। ইসলামে জ্ঞান অর্জনকেও ইবাদত বলা হয়েছে।
২. অহংকার আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত
আল্লাহ যখন আদমকে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের সেজদা করার নির্দেশ দিলেন, সবাই মানল, শুধু ইবলিস অহংকার করে অমান্য করল। সে বলল—‘আমি আগুন থেকে, আর সে মাটি থেকে। আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ৭৬)
এই অবাধ্যতার কারণে সে চিরতরে অভিশপ্ত হয়েছিল। এখান থেকে শিক্ষা—আল্লাহর নির্দেশ আমাদের বোধগম্য হোক বা না হোক, তা মেনে নেওয়া ঈমানের অংশ। অহংকারই ইবলিসকে ধ্বংস করেছে। তাই মুসলমানকে সব সময় বিনম্র থাকতে হবে।
৩. শয়তান মানবজাতির চিরশত্রু
আদম (আ.) ও হাওয়াকে জান্নাতে বলা হয়েছিল—‘আর হে আদম, তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বাস কর। অতঃপর তোমরা আহার কর যেখান থেকে চাও এবং এই গাছটির নিকটবর্তী হয়ো না। তাহলে তোমরা উভয়ে জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।
অতঃপর শয়তান তাদেরকে প্ররোচনা দিল, যাতে সে তাদের জন্য প্রকাশ করে দেয় তাদের লজ্জাস্থান, যা তাদের থেকে গোপন করা হয়েছিল এবং সে বলল, ‘তোমাদের রব তোমাদেরকে কেবল এ জন্য এ গাছ থেকে নিষেধ করেছেন যে, (খেলে) তোমরা ফেরেশতা হয়ে যাবে অথবা তোমরা চিরস্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’।(সুরা আরাফ, আয়াত : ১৯-২০)
শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে তারা ভুল করলেন এবং তাদেরকে পৃথিবীতে নামিয়ে দেওয়া হলো। আল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন—শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (সুরা ত্বহা, আয়াত : ১২৩)
মানব জাতির আদি পিতাকে শয়তান যেভাবে প্ররোচিত করেছিল এবং আল্লাহর হুকুম অমান্য করতে প্রলুব্ধ করলেছিল, ঠিক সেভাবেই আজও সে মানুষকে সরিসরি পাপের কথা বলে না, বরং মানুষের সামনে পাপ কাজকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে—তার কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে।
৪. তওবা সবকিছু বদলে দেয়
আদম (আ.) ও ইবলিস দুজনেই ভুল করেছিলেন। কিন্তু পার্থক্য হলো— আদম (আ.) আন্তরিকভাবে ক্ষমা চেয়েছিলেন, আর ইবলিস অহংকারে অটল ছিল।
আদম (আ.) দোয়া করেছিলেন— হে আমাদের রব! আমরা নিজেরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৩)
এই শিক্ষা আমাদের জন্য চিরন্তন—মানুষ ভুল করবেই, কিন্তু আল্লাহর রহমত আমাদের ভুলের চেয়ে বড়। তাই বারবার তওবা করতে হবে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
আদম (আ.)-এর ঘটনা থেকে আমাদের শিখায়—
জ্ঞান অর্জন আমাদের মর্যাদা বাড়ায়।
অহংকার ধ্বংস ডেকে আনে।
শয়তান আমাদের আজীবনের শত্রু।
তওবাই মুক্তির পথ।
কোরআনে বর্ণিত এই ঘটনাগুলো শুধু গল্প নয়, এগুলো চিরন্তন শিক্ষার ভান্ডার। সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনা করতে কোরআনের এই ঘটনাগুলোর শিক্ষা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করা উচিত।
আপনার মতামত দিন:
(মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।)